নিউইয়র্কে নতুন অধ্যায়: প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানী

Zohran Kwame Mamdani New York Mayor

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক, আমেরিকার বৃহত্তম নগর, বিশ্বের আর্থিক রাজধানী। সেই শহরেই রচিত হল এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ইতিহাস। মেয়র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নিয়ে শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকান-জন্ম মেয়র হলেন জোহরান কওয়ামে মামদানী।

Advertisements

ডেমোক্র্যাটের জয়

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এই তরুণ প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটের জয় নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আগামী ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর তিনি হবেন শহরের গত একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ মেয়র।

   

‘আন্ডারডগ’ প্রার্থী হিসেবে শুরু করে মামদানীর এই উত্থান কার্যত এক রাজনৈতিক বিপ্লব। শ্রমজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা এবং প্রগতিশীল সমাজনীতির বার্তা নিয়েই তিনি দখল করেছেন নিউইয়র্কের পাঁচটি বরোর জনমনে। জুন মাসের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতেই প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করেছিলেন তিনি; মূল নির্বাচনে সেই জয় আরও দৃঢ় করলেন। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া বহুলাংশে পিছিয়ে পড়েন, যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কটাক্ষ উপেক্ষা করেই তিনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন।

পরাজিত কার্টিস স্লিওয়া Zohran Kwame Mamdani New York Mayor

বোর্ড অব ইলেকশনসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেয়র ভোটে অংশ নেন দুই মিলিয়নেরও বেশি নিউইয়র্কবাসী— যা ১৯৬৯ সালের পর সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি।

পরাজয় স্বীকার করে কার্টিস স্লিওয়া বলেন, “আমরা শহর ছাড়ছি না। নতুন মেয়রকে আমরা দায়বদ্ধ রাখব, যেন তিনি সকলের জন্য কাজ করেন এবং সমাজতন্ত্র দিয়ে পুঁজিবাদকে প্রতিস্থাপন না করেন।”

তবে প্রচারকাল জুড়ে মামদানী ছিলেন রিপাবলিকানদের প্রধান নিশানায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে হুমকি দেন নিউইয়র্কের ফেডারেল ফান্ডিং স্থগিত করার, এমনকি শহর ‘দখল’ করারও। নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প, যদিও মামদানী ২০১৮ সালেই মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন।

Advertisements

মামদানীর পরিচয়

উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানী চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী মাহমুদ মামদানীর সন্তান। শৈশবে নিউইয়র্কে পাড়ি দিয়ে বড় হয়েছেন কুইন্সে, শহরের এক বহুসাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠা এই তরুণ রাজনীতিক তাই নিউইয়র্ককেই বলেন “নিজের ঘর”।

তাঁর প্রচারের মূল সুর ছিল সাধারণ মানুষের জীবনের সাশ্রয়িতা ও নাগরিক অধিকার। বিনামূল্যে শিশু যত্ন, ফ্রি বাস পরিষেবা, শহর পরিচালিত মুদি দোকান, এমন একাধিক উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কর্পোরেট ও ধনকুবেরদের ওপর কর বাড়িয়ে এসব প্রকল্প চালুর প্রস্তাবই তাঁকে ধনী শ্রেণির চোখে অপ্রিয় করলেও, তরুণ, শ্রমজীবী ও অভিবাসী ভোটারদের কাছে তিনিই হয়ে উঠেছেন আশার প্রতীক।

মামদানীর বড় চ্যালেঞ্জ

তবে বিশ্লেষকদের মতে, মেয়র হিসেবে মামদানীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাঁর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলির অর্থায়ন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক সামলানো। পাশাপাশি প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার অভাবও হতে পারে পরীক্ষার ক্ষেত্র।

তবুও সন্দেহ নেই, জোহরান কওয়ামে মামদানীর এই ঐতিহাসিক বিজয় আমেরিকার শহুরে রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এক যুগ, যেখানে মুসলিম, অভিবাসী ও প্রগতিশীল তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বর নিউইয়র্কের রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে জোরালোভাবে।