‘নো ফার্স্ট ইউজ’ প্রস্তাবেই ২৬/১১ হামলার প্রতিশোধ? জারদারি অধ্যায়ে নতুন বিতর্ক

Zardari No First Use 26/11

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে ঘিরে ফের বিতর্ক। তাঁর ঘনিষ্ঠ মুখপাত্র ফারহাতুল্লাহ বাবরের লেখা নতুন বই ‘দ্য জারদারি প্রেসিডেন্সি: নাও ইট মাস্ট বি টোল্ড’-এ চাঞ্চল্যকর দাবি তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ভারতের উদ্দেশে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ বা পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই নাকি মুম্বইয়ে ২৬/১১-র জঙ্গি হামলার আগুন জ্বলে ওঠে।

Advertisements

থাপারের সঙ্গে স্যাটেলাইট সাক্ষাৎকারে জারদারির ঘোষণা

বাবরের মতে, দিল্লিতে এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আয়োজিত সম্মেলনে করণ থাপারের সঙ্গে স্যাটেলাইট সাক্ষাৎকারে জারদারি এই ঘোষণা করেছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আগে পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার করবে না। তার ঠিক চার দিনের মধ্যেই, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, মুম্বই শহর কেঁপে ওঠে সন্ত্রাসের দানবীয় আঘাতে। তিন দিন ধরে চলা সেই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান ১৬৬ জন।

   

বাবর লিখেছেন, “এই হামলা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের মুখোমুখি পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শান্তির সমস্ত সম্ভাবনা এক মুহূর্তে ভেস্তে যায়।”

‘নো ফার্স্ট ইউজ’ প্রস্তাব

কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ বলছে অন্য কথা। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লস্কর-ই-তইবা-র ১০ জঙ্গি করাচি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ২১ নভেম্বর। ২২ নভেম্বর, যেদিন জারদারি ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ প্রস্তাব দেন, তারা তখন গুজরাত উপকূলে। ২৩ নভেম্বর তারা কুবার নামে একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা দখল নেয় এবং ২৬ নভেম্বর মুম্বই উপকূলে পৌঁছে হামলা চালায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জারদারির ওই প্রস্তাবের সঙ্গে হামলার সরাসরি যোগ না থাকলেও পাকিস্তানি সেনার অস্বস্তি যে প্রবল ছিল, তা স্পষ্ট। কারণ পাকিস্তানই একমাত্র পারমাণবিক রাষ্ট্র, যেখানে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সেনার হাতে।

‘নিউক্লিয়ার রেড লাইনস’ নির্ধারণ

২০০২ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ কিদোয়াই পাকিস্তানের ‘নিউক্লিয়ার রেড লাইনস’ নির্ধারণ করেন— অর্থাৎ কখন ও কী পরিস্থিতিতে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সব ক্ষেত্রেই শর্ত একটাই: ভারতের কোনও সামরিক বা রাজনৈতিক পদক্ষেপের জবাবে প্রতিশোধ।

Advertisements

বইটিতে বাবর আরও লিখেছেন, সেনাবাহিনীর চাপে পড়েই জারদারির প্রেসিডেন্সি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানিই তখন দেশের প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্র। তিনিই ছিলেন আইএসআই প্রধান, যখন ২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ ও ২৬/১১ হামলার পরিকল্পনা তৈরি হয়।

বাবরের দাবি, জারদারির ক্ষমতায় আরোহন সেনার কাছে ছিল ‘অপ্রত্যাশিত ঘটনা’। মুশারফকে উৎখাতের পর সেনা চেয়েছিল অন্য কাউকে প্রেসিডেন্ট করতে, কিন্তু হঠাৎ করেই নেতৃত্বে উঠে আসেন বেনজির ভুট্টোর স্বামী জারদারি।

জারদারি ফের প্রেসিডেন্টের পদে

এমনকি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনার দুটি সুযোগও হাতছাড়া করেন জারদারি, একবার ওসামা বিন লাদেন হত্যাকাণ্ডের পর, এবং আরেকবার পাকিস্তানের নৌ ঘাঁটি পিএনএস মেহরান-এ তালিবানি হামলার পর।

আজ প্রায় দুই দশক পরে, জারদারি ফের প্রেসিডেন্টের পদে। কিন্তু ইতিহাস যেন আবার নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে। ইসলামাবাদে আজও নিয়ন্ত্রণ সেনার হাতেই— কেবল মুখ পালটেছে, বাস্তব পালটায়নি।