রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপর্যস্ত ইউনুস! নেবেন বিশ্বনেতাদের পরামর্শ

ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Rohingya Issue)। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ…

Rohingya Issue

ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Rohingya Issue)। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং সময়-নির্ধারিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এই সংকট এখন ‘বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে’ দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্বনেতাদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করবে।

Advertisements

এই সংকটের সূচনা ২০১৭ সালে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার মাধ্যমে। তখন থেকে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং বান্দরবানের বিশাল শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় এখনও অসংখ্য মানুষ কাটছে দুর্বিষহ জীবন। কিন্তু আন্তর্জাতিক তহবিলের অভাবে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।

   

ড. ইউনূস বলেছেন, “রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন এখনও অব্যাহত এবং এই প্রক্রিয়ার উল্টোমুখী করা আর অপেক্ষা করা যাবে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমান অধিকার এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা অপরিহার্য। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের এই বক্তব্য এসেছে সেই সময়ে যখন মায়ানমারে চলতি গৃহযুদ্ধ রাখাইন রাজ্যে আরও অস্থিরতা বাড়িয়েছে।

সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষে গত এক বছরে আরও ১.৫ লক্ষ মানুষ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এতে শিবিরের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে, কিন্তু তহবিল কমে গেছে। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জন্য ৯২ কোটি ২০ লক্ষ ডলারের তহবিলের আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু এর মাত্র ৩০ শতাংশই পূরণ হয়েছে।

ফলে মাসিক খাদ্য সাহায্য ব্যক্তিপ্রতি মাত্র ৬ ডলারে নেমে এসেছে, যা ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলছে। ড. ইউনূস সতর্ক করেছেন, “এই অবস্থায় রোহিঙ্গা যুবকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, যা অপ্রত্যাশিত বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।” তিনি বর্তমান দাতাদের কাছে বাড়তি সাহায্য এবং সম্ভাব্য দাতাদের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাহায্য চেয়েছেন।

ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত রোডম্যাপের মূলে রয়েছে সাত-দফা পরিকল্পনা, যা তিনি আগস্ট মাসে কক্সবাজারে এক স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগে উপস্থাপন করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে: প্রথমত, সকল স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন এবং উদ্ভাবনী সমাধান খোঁজা; দ্বিতীয়ত, জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান পুনরুজ্জীবিত করে তহবিলের ঘাটতি পূরণ।

এবার যুদ্ধ হবে তেজস্ক্রিয়তা-মহামারী দিয়ে! উদ্বেগ সেনা প্রধানের

তৃতীয়ত, মায়ানমারের সামরিক জান্তা এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সমঝোতা; চতুর্থত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-তে জেনোসাইডের বিচারে গতি আনা। তিনি বলেছেন, “এই সংকট মায়ানমার থেকে এসেছে, তাই সমাধানও সেখানেই। কিন্তু বাংলাদেশ একা এর ভার বহন করতে পারবে না।” এছাড়া, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য সময়-নির্ধারিত পদক্ষেপের উপর জোর দিয়েছেন।