১৪০০ বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে এই ৪ ব্যাবসায়িক সংস্থা

worlds-oldest-companies-japan-heritage-history-legacy

আজকের দুনিয়ায় যেখানে বহু কোম্পানি কয়েক দশকও টিকতে পারে না, সেখানে এমন কিছু সংস্থা আছে যারা শতাব্দী নয়, সহস্রাব্দ ধরে টিকে আছে! ব্যবসা নয়, তারা এখন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রমাণ করে, মুনাফার বাইরেও ব্যবসা মানে সংস্কৃতি, অধ্যবসায় আর ঐতিহ্য রক্ষা। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রাচীনতম চারটি প্রতিষ্ঠানই জাপানে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেকটি এখনো কার্যকর।

Wi-Fi 8 পরীক্ষা সফল, ব্রডব্যান্ডের চেয়ে দ্রুত গতি

কঙ্গো গুমি, প্রতিষ্ঠা ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দ

জাপানের ওসাকায় প্রতিষ্ঠিত কঙ্গো গুমি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো নির্মাণ সংস্থা। ৫৭৮ সালে শুরু হয়েছিল এই কোম্পানির যাত্রা, যখন কোরিয়া থেকে আগত স্থপতি কঙ্গো শিগেমিৎসু জাপানের প্রথম বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব পান। তারপর থেকে ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পরিবারিক ব্যবসা জাপানের মন্দির স্থাপত্যের প্রধান প্রতীক।

Advertisements

১৭শ শতাব্দীর এক স্ক্রোলে উল্লেখ রয়েছে এই পরিবারের ৪০ প্রজন্মের নেতৃত্বের ইতিহাস। যদিও ২০০৬ সালে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কঙ্গো গুমি Takamatsu Construction Group-এর অংশ হয়ে যায়, তবুও তাদের ঐতিহ্য অটুট। আধুনিক যুগে তারা কাঠ ও কংক্রিটের সমন্বয়ে নতুন স্থাপত্যরীতি উদ্ভাবন করে এবং কম্পিউটার-এইডেড ডিজাইন (CAD) প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে যা তাদের প্রাচীনতার মধ্যেও আধুনিকতার প্রতীক করে তুলেছে।

নিশিয়ামা অনসেন কেইউনকান,  প্রতিষ্ঠা ৭০৫ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো হোটেল হিসেবে নিশিয়ামা অনসেন কেইউনকান জাপানের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ইয়ামানাশি প্রিফেকচারে অবস্থিত এই হোটেলটি ৭০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য পরিচিত এই রিসোর্টটি ৫২ প্রজন্ম ধরে একই পরিবার পরিচালনা করেছ ২০১৭ সাল পর্যন্ত।

এখানে অতিথি হিসেবে এসেছেন জাপানের ঐতিহাসিক দাইমিওরা এবং সম্রাট নারুহিতো নিজেও। হোটেলটিতে রয়েছে মাত্র ৩৭টি রুম, তবে প্রতিটি কক্ষেই ঐতিহ্যবাহী জাপানি আতিথেয়তার ছোঁয়া মেলে। আধুনিক আরাম ও প্রাচীন সৌন্দর্যের মিশেল এই হোটেলকে করে তুলেছে জাপানি সংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন।

সেনেন নো ইউ কোমান, প্রতিষ্ঠা ৭১৭ খ্রিস্টাব্দ

৭১৭ সালে হিউকে গননোকামি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সেনেন নো ইউ কোমান বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম হোটেল এবং তৃতীয় প্রাচীনতম সংস্থা। জাপানের কিনোসাকি অনসেন এলাকায় অবস্থিত এই রিওকান-স্টাইল হোটেলটি **৪৬ প্রজন্ম ধরে একই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে** রয়েছে।

এর ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে পরিবারের পুরোনো পাণ্ডুলিপিতে, যা শুধু ব্যবসার নয়, জাপানের স্পা সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের দলিল। উষ্ণ প্রস্রবণ, কাঠের স্থাপত্য, এবং প্রশান্ত জাপানি বাগান—সব মিলিয়ে এই হোটেল এক টুকরো জীবন্ত ইতিহাস।

হোশি রিওকান, প্রতিষ্ঠা ৭১৮ খ্রিস্টাব্দ

জাপানের ইশিকাওয়া অঞ্চলের আওয়াজু অনসেনে অবস্থিত হোশি রিওকান এক সময় গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেছিল বিশ্বের প্রাচীনতম হোটেল হিসেবে। ৭১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হোটেলটি হোশি পরিবারের ৪৬ প্রজন্ম ধরে পরিচালিত হচ্ছে।

এখানকার প্রতিটি রুম সাজানো জাপানি বাগানের চারপাশে, যেখানে প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রশান্তি একে অপরের সঙ্গে মিশে আছে। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা অতিথিপরায়ণতা, সংস্কৃতি ও শান্তির প্রতীক হয়ে রয়েছে।

এই চারটি প্রতিষ্ঠান প্রমাণ করে যে, ঐতিহ্য আর উদ্ভাবনের মেলবন্ধনই দীর্ঘস্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক মন্দা—সবকিছুর মধ্যেও তারা টিকে আছে। কারণ তাদের কাছে ব্যবসা মানে শুধুমাত্র মুনাফা নয়, বরং সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের ধারক হয়ে থাকা। আজকের দ্রুতগামী দুনিয়ায় এই সংস্থাগুলির গল্প আমাদের শেখায় সাফল্য টাকার অঙ্কে নয়, টিকে থাকার মানসিকতায়।

Advertisements