বিশ্ব জনসংখ্যার মানচিত্রে এ বছর ঘটল ঐতিহাসিক পালাবদল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (UNDESA)–এর সর্বশেষ মূল্যায়নে উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর হিসেবে শীর্ষে থাকা টোকিও আর নম্বর ওয়ান নয়। ৪.২ কোটি মানুষের শহর জাকার্তা এখন বিশ্বের বৃহত্তম নগরী। আর দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, যার জনসংখ্যা প্রায় ৩.৭ কোটি।
এই তালিকায় বড় পতন ঘটেছে ভারতের সঙ্গেও গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা টোকিওর, যার জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ কোটিতে এবং শহরটি নেমেছে তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে তালিকার ৯ নম্বরে জায়গা পেয়েছে কলকাতা, যার জনসংখ্যা ২.৩ কোটি।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নতুন তালিকায় কোন শহর কোথায়
জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া) – ৪.২ কোটি
ঢাকা (বাংলাদেশ) – ৩.৭ কোটি
৩. টোকিও (জাপান) – ৩.৩ কোটি
৪. নয়াদিল্লি (ভারত) – ৩ কোটি
৫. সাংহাই (চীন) – ৩ কোটি
৬. গুয়াংজাও (চীন) – ২.৮ কোটি
৭. কায়রো (মিশর) – ২.৬ কোটি
৮. ম্যানিলা (ফিলিপিন্স) – ২.৫ কোটি
৯. কলকাতা (ভারত) – ২.৩ কোটি
১০. সোল (দক্ষিণ কোরিয়া) – ২.২ কোটি
চিত্রটা স্পষ্ট—শীর্ষ ১০ জনবহুল শহরের মধ্যে ৯টিই এশিয়ায়। ব্যতিক্রম কেবল মিশরের কায়রো।
ঢাকার বিস্ফোরক উত্থান, টোকিওর ধীরে ধীরে পতন World’s Largest City Jakarta
২০০০ সালেও টোকিও ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর। কিন্তু জাপানে দ্রুত বয়স্ক জনসংখ্যা ও নিম্ন জন্মহারের কারণে শহরটির বিকাশ থেমে যায়। বিপরীতে ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েছে বিস্ময়কর গতিতে—গ্রাম থেকে মানুষের ঢল, পোশাকশিল্প–কেন্দ্রিক অর্থনীতি, এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে রাজধানী আজ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের পূর্বাভাস আরও চমকপ্রদ—২০৫০ সালের মধ্যেই ঢাকা হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। একই সময়ে টোকিওর জনসংখ্যা আরও কমবে বলেও জানানো হয়েছে।
জাকার্তা শীর্ষে: অর্জন নয়, বরং উদ্বেগের কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাকার্তার এই উত্থান কোনও সাফল্যের ইঙ্গিত দেয় না—বরং সেখানে নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যা বিস্তার ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
জাকার্তার প্রধান সমস্যাগুলি—
চরম মাত্রার যানজট
উদ্বেগজনক দূষণ
বর্ষায় বারবার জলজমা
মাটির বসে যাওয়ার ঝুঁকি
নগর পরিকল্পনায় বড়সড় ঘাটতি
এই সমস্যা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে ইন্দোনেশিয়া সরকার ইতিমধ্যেই রাজধানী সরিয়ে বোর্নিও দ্বীপে ‘নুসান্তারা’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রকল্পটি এখনও পিছিয়ে রয়েছে ও বিনিয়োগও আশানুরূপ নয়।
বিশ্ব নগরায়ণের দ্রুত রূপান্তর
রাষ্ট্রসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫% মানুষ এখন শহরে থাকে।
১৯৫০ সালে এই হার ছিল মাত্র ২০%।
মেগাসিটি (১ কোটির বেশি জনসংখ্যা) ১৯৭৫ সালে ছিল ৮টি, এখন তা ৩৩টি, যার ১৯টিই এশিয়ায়।
UNDESA–এর আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল লি জুনহুয়ার ভাষায়—
“নগরায়ণই এখন মানবসমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। সঠিক পরিকল্পনায় এটি জলবায়ু মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে পারে।”
আগামী মেগাসিটি কারা?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের পূর্বাভাস—২০৫০ সালের মধ্যে নতুন কয়েকটি শহর মেগাসিটির তালিকায় যুক্ত হতে পারে—
কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া)
আদ্দিস আবাবা (ইথিওপিয়া)
হাজিপুর (ভারত)
বিশ্বের নগর চিত্র তাই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। জাকার্তা ও ঢাকার উত্থান যেমন এশিয়ার নগর সংকটকে সামনে আনছে, তেমনই টোকিওর পতন দেখাচ্ছে—জনসংখ্যাগত পরিবর্তনই আগামী দশকে শহরের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
