ওয়াল্ড হ্যাপিনেস রির্পোট(World Happiness Report) বা সুখী দেশের তালিকায় রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী ফিনল্যান্ড ফের বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। প্রতিবছর প্রকাশিত এই রিপোর্টটি বিশ্বের ১৪৭টি দেশের মধ্যে সুখ নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সহায়তা উপাদানগুলির ওপর ভিত্তি করে স্থান তৈরি করে। চলতি বছরের রিপোর্টটি ২০ শে মার্চ প্রকাশিত হয়। যা ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টার, গ্যালাপ, ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক এবং একটি স্বাধীন সম্পাদকীয় বোর্ডের সহযোগিতায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের পরেই রয়েছে ডেনমার্ক এবং আইসল্যান্ড, যারা ধারাবাহিকভাবে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে। আফগানিস্তান, সিরিয়ালিওন ও লেবানন এই তিনটি দেশ সবচেয়ে কম সুখী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার অন্যতম কারণ আফগান মহিলাদের জীবনযাত্রার কঠিনতা এবং সংকটজনক পরিস্থিতি।
ভারতের র্যাংক এবং প্রতিবেশী দেশগুলি:
ভারত ১৪৭টি দেশের মধ্যে ১১৮ তম স্থানে রয়েছে। ২০১২ সালে ভারতের র্যাংক ছিল ১৪৪, যা বর্তমানে কিছুটা উন্নত হলেও, এখনও অনেক পিছিয়ে। ভারতের সর্বোচ্চ র্যাংক ছিল ২০২২ সালে, যখন ভারত ৯৪ তম অবস্থানে পৌঁছেছিল। ভারতের সুখী স্কোরের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে দেশের সামাজিক সহায়তা, যেখানে উচ্চ জনসংখ্যা, সম্প্রদায় ভিত্তিক সংস্কৃতি এবং বৃহৎ পরিবারসমূহের সহাবস্থান রয়েছে।
তবে রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত সবচেয়ে কম স্কোর করেছে স্বাধীনতা বা ‘ফ্রিডম’ ফ্যাক্টরে, যেখানে মানুষের মতামত এবং সামাজিক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। মানুষ কি নিজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, এবং তাদের উপলব্ধ বিকল্পগুলো কি সন্তোষজনক তা এই ফ্যাক্টরে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে, পাকিস্তান ১০৯ তম, বাংলাদেশ ১৩৪ তম, শ্রীলঙ্কা ১৩৩ তম, নেপাল ৯২ তম এবং চীন ৬৮ তম স্থানে রয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুখী স্কোরেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে পশ্চিম দেশগুলি শীর্ষ ২০-তে আধিপত্য বিস্তার করে, সেখানে কোস্টা রিকা এবং মেক্সিকো প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে। কোস্টা রিকা ৬ষ্ঠ এবং মেক্সিকো ১০ম স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সর্বনিম্ন র্যাংকিংয়ে ২৪ তম অবস্থান করেছে। যা দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা হতাশা এবং একাকীত্বের কারণে হয়েছে। যুক্তরাজ্যও তাদের সবচেয়ে কম র্যাংকিং ২৩ তম অর্জন করেছে, যা ২০১৭ সালের পর তাদের সবচেয়ে খারাপ স্কোর।
চলতি বছরের রিপোর্টে মূলত “কেয়ারিং এবং শেয়ারিং”-এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা মানুষের সুখীতা এবং সন্তুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই রিপোর্টে পৃথিবীজুড়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, মানুষ কি দানে অংশ নেয় এবং তারা কি সমাজ থেকে যথাযথ সহায়তা পায়। এটি যেমন দানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য উপকারী, তেমনই এটি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জন্যও বেশ ফলপ্রসূ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যেমন শেক্সপিয়রের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ নাটকে দয়ার কথা বলা হয়েছে, তেমনি ‘কেয়ারিং’ একটি দ্বৈত উপকারী বিষয় – এটি দেয়ালেনের জন্য এবং গ্রহণকারীর জন্য সমানভাবে উপকারী।”
এবারের রিপোর্টটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে সেই দেশগুলোর প্রতি, যেখানে সম্প্রদায়ভিত্তিক সহায়তা এবং সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এটি বোঝাতে চায় যে একে অপরকে সহায়তা করা শুধুমাত্র সমাজের উন্নতিই নয়, ব্যক্তিগত সুখীতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ব সুখী দেশের রিপোর্ট ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সুখী হওয়ার জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, সামাজিক সহায়তা, স্বাধীনতা এবং পরস্পরের সহানুভূতি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।