World Bank: অচিরেই দেউলিয়া হচ্ছে ১০০-র বেশি দেশ, বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় নাম রয়েছে ভারতের?

বিশ্বের অন্তত ১০৪টি দেশ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছে, এমনটাই জানাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের (UNO) উন্নয়ন কর্মসূচি বিভাগের প্রধান আচিম স্টেইনার এবং বিশ্বব্যাংক…

World Bank concern over countries will became defaulter and bankrupts in near future

বিশ্বের অন্তত ১০৪টি দেশ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছে, এমনটাই জানাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের (UNO) উন্নয়ন কর্মসূচি বিভাগের প্রধান আচিম স্টেইনার এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank)। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশ যে কোনও দিন আর্থিক দেউলিয়াত্বের মুখে পড়তে পারে, এবং এই পরিস্থিতি শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যই নয়, বরং বেশ কিছু উন্নত দেশও সংকটের মধ্যে পড়েছে। 

পাকিস্তানে ‘আরব বসন্ত’, ইমরানের মুক্তির দাবিতে জ্বলছে গাড়ি-বাড়ি

   

২০২২ সালে প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা, যা ছিল একটি বড় সতর্কবার্তা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য। শ্রীলঙ্কার পর, দ্রুতই একই পথে চলে যায় প্রতিবেশী দেশ নেপাল। এরপর তালিকায় যোগ হয় পেরু, তিউনিশিয়া, দুই সুদান, লেবানন, ঘানা, কেনিয়া, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং তুরস্কের নামও। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশও যে কোনও সময় শ্রীলঙ্কার মতো সংকটের মুখে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক এই পরিস্থিতি ‘অর্থনৈতিক মহামন্দা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে দেশের বৈদেশিক ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একেবারে সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকটি দেশের সরকারও এই সংকটের মোকাবিলা করতে পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়েছে। যেমন শ্রীলঙ্কা, যেটি বৈদেশিক ঋণের বোঝা এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার কোষাগার শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে দেউলিয়া হয়ে যায়। এটি ছিল একটি গম্ভীর সংকেত, যা গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ঝুঁকির দিকে নির্দেশ করেছে।

কিন্তু, প্রশ্ন আসে—কখন এবং কেন একটি রাষ্ট্রকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়? অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুটি প্রধান পরিস্থিতিতে কোনো দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। প্রথমত, যখন কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার কোষাগার প্রায় শূন্য হয়ে যায় এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা হারায়। দ্বিতীয়ত, যখন দেশটির সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকে না এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগ মিথ্যা, দাবি AGEL-এর

বিশ্বব্যাংক এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছু দেশেই এই ধরনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উদাহরণ হিসেবে, শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর, সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যে তারা আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছে নতুন করে ঋণ পরিশোধের জন্য আর কোনো অর্থ নেই। এই ধরনের পরিস্থিতি যখন ঘটে, তখন ওই দেশের সরকারকে আন্তর্জাতিক সাহায্য নিতে হয়, অথবা ঋণ পুনঃগঠন করতে হয়। এর ফলে, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একেবারে নাজুক হয়ে পড়ে এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

বিশ্বব্যাংক ও রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদন অনুসারে, এই সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো এই সংকটের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে, আফ্রিকার দেশগুলো যেমন সুদান, ঘানা, কেনিয়া, তিউনিশিয়া ইত্যাদি দেশে বৈদেশিক ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ মুদ্রার অবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। এই দেশগুলোর সরকার বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে জনজীবনে অস্থিরতা চলছে।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশও সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, যদিও এই দেশগুলোর আর্থিক অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো তীব্র নয়। তবে, এই দেশের ঋণের পরিমাণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবও উদ্বেগজনক। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নেমেছে, যা আগামী দিনে সংকট আরও গভীর করতে পারে। পাকিস্তানের অবস্থাও খুব সুবিধাজনক নয়। পাকিস্তানেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং অভ্যন্তরীণ কোষাগারের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে।

বিশ্বব্যাংক এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ সতর্ক করছে, এই ধরনের সংকট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাজারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যদি এসব দেশ তাদের ঋণ পুনঃগঠন না করতে পারে বা বিদেশি ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় না পৌঁছাতে পারে, তবে সেই দেশের অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

পাক আমলে ইসকন পূর্ববাংলায় শাখা খুলেছিল, এবার বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে?

বিশ্বব্যাংক এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ এই সংকটের মোকাবিলায় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। প্রথমত, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক ঋণ পুনঃগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের পরিস্থিতিতে দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে নতুন মুদ্রানীতি গ্রহণ করা জরুরি। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে দেউলিয়াত্ব ঠেকানো সম্ভব। তবে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সব দেশের সরকারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পরিচালনার দক্ষতা।

এই পরিস্থিতি যখন বাড়বে, তখন বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোও সংকটে পড়তে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক বড় ধরনের সংকেত।