রামভক্ত ঋষি সুনাক ক্ষমতাচ্যুত, ব্রিটেনের ক্ষমতায় কে এই ‘উগ্র বাম’ কিয়ের স্টারমার?

দলটি মধ্য বাম তবে দলের নেতা একদা উগ্র বাম! ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হবেন স্যার কিয়ের স্টারমার। বিরোধীপক্ষ থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে এল লেবার…

দলটি মধ্য বাম তবে দলের নেতা একদা উগ্র বাম! ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হবেন স্যার কিয়ের স্টারমার। বিরোধীপক্ষ থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে এল লেবার পার্টি। ভোটে (UK Election 2024) হারল কনজারভেটিভ পার্টি। ক্ষমতাচ্যুত হলেন দেশটির প্রথম অ-ব্রিটিশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হননি। এবার তাঁর নেতৃত্বে ভোটে নেমে ভয়াবহ পতন হল কনজারভেটিভদের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও অনেক আগের কথা। ১৯২৪ সাল থেকে দশকের পর দশক দ্বিমুখী ব্রিটিশ রাজনীতির দুই মেরুতে আছে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি। এই ধারা বজায় থাকল এবারের জাতীয় নির্বাচনেও।

   

দলীয় গোষ্ঠীকোন্দলে বারবার প্রধানমন্ত্রী বদল করে সরকার টিকিয়ে রেখেছিল কনজারভেটিভ পার্টি। সেই সুযোগে বিশ্বের অন্যতম শিল্পপতি কে নারায়ণমূর্তির জামাতা ঋষি সুনাক হয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর স্ত্রী অক্ষতার পিতা নারায়ণমূর্তি। রামভক্ত সুনাকের জয়ের জন্য ব্রিটেনে থাকা ‘হিন্দু কমিউনিটি’ বিপুল হিন্দু ভোট একাট্টা করার আহ্বান জানিয়েছিল। প্রতিপক্ষ লেবার পার্টির অনুকূলে ছিল বিপুল সংখ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মূলত বাংলাভাষী ভোটের সিংহভাগ পড়েছে লেবারপার্টির ঘরে। ফলে রামভক্ত ঋষি সুনাকের সরকার পরাজিত। জয়ী উগ্র বামপন্থী কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি।

বিবিসি’র খবর, লেবার পার্টি প্রাক্তন প্রধান ও কট্টর বামপন্থী বলে চর্চিত জেরেমি করবিন দলত্যাগ করেও নির্দল হয়ে জয়ী হয়েছেন। লেবার পার্টিতে করবিনই তুলে এনেছিলেন কিয়ার স্টারমারকে। তখন দলটি ছিল বিরোধী আসনে। স্টারমারে পার্টি লাইন মানতে না পেরে করবিন দলত্যাগ করেন। করবিনের মত কট্টর বাম নেতা লেবার পার্টি থেকে সরে দাঁড়ানোয় বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন পড়েছিল। কারণ, তাঁকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে লেবার পার্টি চিহ্নিত করে়ছিল। দলীয় পার্টি লাইন সংঘাত থাকলেও স্টারমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে করবিনের।

উগ্র বাম নাকি নরম বাম-কে কিয়ার স্টারমার?

বিবিসি জানাচ্ছে, কিয়ের স্টারমারের পিতা কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে কাজ করতেন এবং মা ছিলেন নার্স। যুবক কিয়ের স্টারমার ছিলেন উগ্র বামপন্থী। ১৯৬২ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে একজন। কিয়ের স্টারমার বেড়ে ওঠেন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের সারে-তে। তার পরিবার কট্টর লেবার পার্টির সমর্থক। স্কটিশ খনি শ্রমিক ও লেবার পার্টির নেতা কিয়ের হার্ডির নাম অনুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। বড় হয়ে ওঠার সময় কিয়েরের পারিবারিক জীবন খুব সুখকর ছিল না। দূরত্ব রেখে চলতেন তার বাবা। পরে ব্যারিস্টার হন স্টারমার। মানবাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হন। নাইট উপাধি পান।

লেবার পার্টির নেতা হিসেবে স্যার কিয়ের স্টারমার প্রথমবার সংসদে যান ২০১৫ সালে। কট্টর বাম নেতা জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি তখন বিরোধী দল। লেবার পার্টির জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল এটা। ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হেরেছিল ওই দল, যা জেরেমি করবিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর লেবার পার্টির নেতা হওয়ার সুযোগ পান স্যার কিয়ের।

তবে লেবার পার্টির অনেকে বলেন, সংসদীয় প্রার্থী হিসেবে যাতে শুধুমাত্র মধ্যপন্থী সদস্যরাই দাঁড়াতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে স্যার কিয়ের দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চালাচ্ছেন। এই কারণে তিনি মধ্য-বাম নেতা।