তিন দিকে ভারত। একপাশে একফালি মায়মানার। আর বঙ্গোপসাগর। সেই সমুদ্র সীমান্তেও আছে ভারত ও মায়ানমার। এই দুটি দেশের সাথেই স্থল, আকাশ ও জল সীমান্তে ঘেরা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সামরিক ও কূটনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব পায় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কাছে। এমনই বাংলাদেশের (Bangladesh) সাম্প্রতিক মিসাইল ক্ষমতা নিয়ে চলছে বিস্তর চর্চা। বাংলাদেশের এই মিসাইল পাল্লায় ভারতের কোন কোন শহর পড়ছে?
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন চিন ও তুরস্ক থেকে কেনা মিসাইলগুলি সর্বাধিক ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সীমান্ত লাগোয়া কোনো এলাকা থেকে বাংলাদেশি মিসাইলের পাল্লায় কলকাতা, আগরতলার মতো শহর থাকছে। বাংলাদেশ সীমান্তের ভারতীয় রাজ্যগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম। আর মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের বাহিনী মজুত থাকে।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিচিত। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে সেদেশের সামরিক বাহিনীতে মানববিহীন ড্রোন সহ অন্তত ২৩ ধরণের নতুন আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। তবে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বসেই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এইসব ক্ষেপণাস্ত্র। সেদিক থেকে বাংলাদেশের মিসাইল ভান্ডার কতটা সমৃদ্ধ? চলুন জেনে নেওয়া যাক –
BBC জানাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে চিন ও তুরস্ক সহ ১২টি দেশ থেকে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য ১১ ধরণের, নৌবাহিনীর জন্য ৮ এবং বিমান বাহিনীর জন্য ৪ ধরণের যুদ্ধ সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৪৫ টি দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ তম স্থানে। সেটা ক্রমাগত উপরের দিকে উঠছে। বিশ্বের সমরাস্ত্রের এগিয়ে থাকা দেশগুলির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মিসাইল। বাংলাদেশেরো রয়েছে সেই অস্ত্র। গত ৫ বছরে যে সমস্ত অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ তার মধ্যে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (missile) সংযোজন করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী সেনাবাহিনীর জন্য সারফেস টু এয়ার মিসাইল আনা হয়েছে চিন থেকে। তবে এর রেঞ্জ কত বা এটি কোন পাল্লার তার সেরকম কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি সরকার।
এছাড়া বাংলাদেশের স্থল-নৌ-বিমান বাহিনী কয়েক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিসিপ মিসাইল। এয়ার টু এয়ার মিসাইল। তবে তিন বাহিনীর মধ্যে সবথেকে বেশি রেঞ্জ, কার্যক্ষমতা এবং সংখ্যার দিক থেকেও বেশি মিসাইল ব্যবহারকারী ফোর্স হিসাবে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের নৌ বাহিনী।
ইটালি থেকে ক্রয় করা অটোম্যাট এমকেটু ব্লক ৪ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ফ্রিগেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ফ্রিগেট রেডি টু ফায়ার মোডে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে। এছাড়া আরো কিছু ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজের স্টোর করা থাকে। যা পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি লোড করতে হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি বাংলাদেশের হাতে থাকা সর্বোচ্চ রেঞ্জের ক্ষেপনাস্ত্র। নৌবাহিনীতে থাকা সি৮০২এ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের সব থেকে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এটি। চিনের তৈরি এই মিসাইলটি বাংলাদেশের যুদ্ধ জাহাজ থেকে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে।সি৮০২এ- এর রেঞ্জ হচ্ছে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
৩৭০৪ অ্যান্টিশিপ ক্ষেপণাস্ত্রটিও চিনের তৈরি। এটি সে দেশের তৈরি দুর্জয় ক্লাস,পেট্রোল ক্রাফট, ক্যাশল ক্লাস করবেট এবং মিসাইল বোটে ব্যবহার করা হয়। মিসাইলটির সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৪৫ কিলোমিটার।এসএম৯০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল তিন বাহিনীর হাতেই রয়েছে। এই মিসাইলের রেঞ্জ ১৫ কিলোমিটার। এই রেঞ্জের মধ্যে বিমান, হেলিকপ্টার এবং মিসাইল ধ্বংস করতে পারে এই মিসাইলটি। এটি একটি শর্ট রেঞ্জ এসএম সিস্টেম। যার মূল কাজ গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যুদ্ধজাহাজ, বিমান ঘাঁটির পয়েন্ট ডিফেন্স প্রদান করা।
চিনের তৈরি এসএল ৩০০০ এন মিসাইল ব্যবহার করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ নয় কিলোমিটার। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো সুপারসনিক মিসাইল রুখে দেওয়ার ক্ষমতা।বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে থাকা সর্বোচ্চ রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার মিসাইল হল আর ২৭ ।রাশিয়ার তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত মিগ২১ মিসাইলে ব্যবহার করা হয়। ৮০ কিলোমিটার দূরে থাকা প্রতিপক্ষের বিমান ধ্বংস করতে পারে এটি।
এছাড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংক উদ্ধার করে এনে মেরামত করে আবার তা যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর জন্য জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আর্মার্ড রিকভারি ভেহিক্যাল ফর ট্যাঙ্ক।