কূটনৈতিক যুদ্ধ! জঙ্গি হাফিজ ও মাসুদের বিনিময়ে পাকিস্তান কী চাইবে?

মোস্ট ওয়ান্টেড দুই আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদ ও মাসুদ আজাহার বহাল তবিয়তে পাকিস্তানে থাকে। সরকারি নিরাপত্তা পায়। এমনই দুই ভিভিআইপিকে ভারতের হাতে তুলে দেবে…

Pakistan protects Hafiz Saeed

মোস্ট ওয়ান্টেড দুই আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদ ও মাসুদ আজাহার বহাল তবিয়তে পাকিস্তানে থাকে। সরকারি নিরাপত্তা পায়। এমনই দুই ভিভিআইপিকে ভারতের হাতে তুলে দেবে পাক সরকার! এরকমই বার্তার পিছনে পাক সরকারের অবস্থান নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা প্রবল।

পাকিস্তান সত্যিই বদলেছে?
আন্তর্জাতিক মুখ রক্ষার ছলনা?
জঙ্গি নেতাদের ফেরৎ দিয়ে আলোচনা।
ভারতের সামনে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।

   

সম্প্রতি কাশ্মীরে পর্যটক গণহত্যায় জড়িতরা পাকিস্তানের দিক থেকে ঢুকেছিল। প্রত্যাঘাতে অধিকৃত কাশ্নীর ও পাকিস্তানের কিছু অংশে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে ভারত। তছনছ হয় একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি। দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের মাঝে ভারতকে গরম বার্তা দিলেও এবার নরম হয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে দেওয়া মন্তব্য ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গন সরগরম। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, পাকিস্তান লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদ ও জইশ-ই-মহম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি। কিন্তু তার আগে চাই ভারত সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা। তার এই বার্তা আপাতদৃষ্টিতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক চাপ মেটানোর কৌশল হতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর গভীরে রয়েছে বহুস্তরীয় কূটনৈতিক হিসেব।

পাকিস্তানের তরফে “সহযোগিতা” চাওয়ার অর্থ

জারদারির বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে যে শব্দবন্ধটি নিয়ে তা হল “ভারতের সহযোগিতা”। পাকিস্তান কী ধরনের সহযোগিতা চাইছে? সম্ভাব্য চারটি ক্ষেত্র বিশ্লেষকেরা সামনে রেখেছেন:

১. কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার চাপ:
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই চায় ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর ইস্যুকে ফের টেনে আনুক। ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির পর দিল্লি যে একতরফা অবস্থান নিয়েছে, তা ভাঙতে হাফিজ-মাসুদকে “বার্গেনিং চিপ” (চাওয়া-পাওয়া দর কষাকষি) হিসেবে ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান।

Advertisements

২. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পুনরুদ্ধার:
পাকিস্তান কিছুদিন আগেই FATF-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়েছে। কিন্তু তারা চাইছে আরও নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষত আর্থিক সহায়তার দিক থেকে। ভারত যদি তার পক্ষে সওয়াল করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে, তাহলে তা পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত লাভ।সদর দফতর প্যারিস। FATF ( Financial Action Task Force) হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। মূল কাজ বিশ্বজুড়ে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থ দান এবং অর্থনৈতিক অপরাধ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তৈরি ও তদারকি করা। ১৯৮৯ সালে জি-৭ দেশগুলোর উদ্যোগে তৈরি। বর্তমানে ৩৯টি দেশ ও সংস্থা সদস্য। ভারত সদস্য হলেও পাকিস্তান নয়।

৩. বাণিজ্য পুনরারম্ভ ও সীমান্ত নরমানো:
দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রায় স্তব্ধ। পাকিস্তান চাইতে পারে সীমান্ত বাণিজ্য পুনরুদ্ধার। বিশেষত দুই দেশের মধ্যে থাকা পাঞ্জাবের স্থল সীমান্ত খোলার চাপ।

৪. আফগানিস্তান ও চিন প্রসঙ্গে নয়া বোঝাপড়া:
চীন-পাকিস্তান করিডোরে ভারত আপত্তি জানিয়ে আসছে। অপরদিকে আফগানিস্তানে তালিবান প্রভাব নিয়েও দিল্লি উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান চাইতে পারে এ দুই ইস্যুতে ভারতের অবস্থান কিছুটা নমনীয় হোক।

কূটনৈতিক সূত্রে ইঙ্গিত, দিল্লি পাকিস্তানের ‘শর্তসাপেক্ষ’ প্রতিশ্রুতিকে সন্দেহের চোখেই দেখছে। এই দুই কুখ্যাত জঙ্গিকে হস্তান্তরের জন্য কতটা আন্তরিক পাকিস্তান, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এই মুহূর্তে হাফিজ ও মাসুদের প্রত্যর্পণ শুধুই একটি সম্ভাবনা। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান একটি বার্তা দিল আন্তর্জাতিক মহলকে তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। তবে শর্তসাপেক্ষ সেই আলোচনার মঞ্চ কতটা ভারত মেনে নেবে, তা আগামী মাসগুলিতে স্পষ্ট হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশল মানচিত্রে এই ইঙ্গিত হয়তো এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।