২.৮ বিলিয়ন মানুষের কল্যাণে ভারত-চীন সহযোগিতার ওপর জোর দিলেন মোদী

তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। দুই…

২.৮ বিলিয়ন মানুষের কল্যাণে ভারত-চীন সহযোগিতার ওপর জোর দিলেন মোদী

তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। দুই দেশের মধ্যে পূর্ব লাদাখ সীমান্ত বিরোধ এবং গালওয়ান উপত্যকার মর্মান্তিক সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। মোদী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় পারস্পরিক আস্থা, সম্মান ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে।

মোদী বৈঠকের সূচনাতেই উল্লেখ করেন, গত বছরের বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ার পর সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরে এসেছে। তিনি জানান, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধি স্তরে ঐকমত্য হয়েছে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে যৌথভাবে উদ্যোগী হওয়ার বার্তাও দেন দুই নেতা। এই পদক্ষেপকে ভবিষ্যতে ভারত-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে একটি বড় সোপান হিসাবে দেখা হচ্ছে।

   

মোদী তাঁর বক্তব্যে কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকেই গুরুত্ব দেননি, বরং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ পুনঃস্থাপনের কথাও বলেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা আবার শুরু করা হবে, যা মহামারী এবং সীমান্ত উত্তেজনার কারণে স্থগিত হয়ে ছিল। পাশাপাশি তিনি পুনরায় শুরু হওয়া কৈলাস মানসসরোবর যাত্রার কথাও উল্লেখ করেন। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জনসম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও চীন – এশিয়ার দুই বৃহত্তম অর্থনীতি – একসঙ্গে কাজ করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতি আসবে বলে বিশ্বাস করেন মোদী। তিনি জাপানের দ্য ইয়োমিউরি শিম্বুন পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ভারত ও চীনের মধ্যে স্থিতিশীল, পূর্বানুমেয় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”

উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সাম্প্রতিক বৈঠকের পরই দুই দেশ একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। তাতে ছিল সীমান্ত শান্তি রক্ষার যৌথ উদ্যোগ, সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালু করা এবং যত দ্রুত সম্ভব সরাসরি বিমান পরিষেবা চালুর প্রতিশ্রুতি। এই পদক্ষেপের ধারাবাহিকতাতেই মোদী-শি বৈঠককে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তব্যে চীনের সফল SCO সভাপতিত্বের জন্য শি জিনপিং-কে অভিনন্দন জানান। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে SCO কেবল একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা মঞ্চ নয়, বরং বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলেরও অংশ। এখানে ভারত-চীন সহযোগিতা শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বরং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisements

২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত-চীন সম্পর্ক প্রায় ভেঙে পড়েছিল। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ প্রায় স্থবির হয়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার, সীমান্ত শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি, অর্থনৈতিক সংযোগ পুনঃস্থাপন ইত্যাদি পদক্ষেপ ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ খুলে দিচ্ছে।

তবে চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। সীমান্তে শান্তি ফিরলেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিকতা ফেরাতে সময় লাগবে। ভারত-চীন সম্পর্কের মূল ভিত্তি পারস্পরিক আস্থা, যা ২০২০ সালের ঘটনার পর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই মোদীর “পারস্পরিক আস্থা, সম্মান ও সংবেদনশীলতা”-র ওপর জোর দেওয়া আসলে সেই ভাঙা আস্থা পুনর্গঠনের প্রয়াস।

এখনও পর্যন্ত বৈঠক থেকে নির্দিষ্ট ফলাফল প্রকাশ্যে আসেনি। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী সংলাপের পরিবেশ তৈরি করবে। শান্তিপূর্ণ সীমান্ত, পুনরায় চালু হওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা – সব মিলিয়ে ভারত-চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।

মোদী-শি বৈঠককে ঘিরে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা একেবারেই অমূলক নয়। দুই দেশই জানে, ২.৮ বিলিয়ন মানুষের কল্যাণ সরাসরি তাদের সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমিত করে যদি ভারত ও চীন ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে, তবে কেবল দুই দেশের সম্পর্কই নয়, সমগ্র এশিয়া এবং বিশ্বই লাভবান হবে।