মায়ানমার সীমান্তে ১১ পাকিস্তানিসহ অস্ত্র চোরাচালানকারীর দল আটক

weapons-smuggling-11-pakistanis-arrested-thailand-myanmar-border

থাইল্যান্ড (Thailand) –মায়ানমার সীমান্তে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বে বড় সাফল্য অর্জন করেছে থাই কর্তৃপক্ষ। সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ১৯ নভেম্বর মায়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করা মোট ৩৬ জন বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে থাই বর্ডার সিকিউরিটি। গ্রেফতার হওয়া এই ব্যক্তিদের ওপর অভিযোগ—তারা নিয়মিতভাবে মায়ানমারে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার করে আসছিল এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisements

এই ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জন পাকিস্তানি নাগরিক, একজন কাজাখ, একজন মিশরীয় এবং একজন চীনা নাগরিক রয়েছে বলে সীমান্ত সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন দক্ষিণ এশীয় দেশের মানুষ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই বহুজাতিক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই মায়ানমারের অশান্ত অঞ্চলগুলোতে অস্ত্র পাচার করে আসছিল।

   

🔶 পালানোর সময় ধরা পড়ল পুরো চক্র

পূর্ব মায়ানমারের মিয়াওয়াডি টাউনশিপের শ্বেকোকো এলাকা থেকে থাই সীমান্তে অবস্থিত থাউং রিন নদী পেরিয়ে ওং ফা গ্রামের দিকে পালানোর চেষ্টা করার সময় তাদের আটক করে থাই নিরাপত্তা বাহিনী। সীমান্তের এই অংশটি দীর্ঘদিন ধরেই পাচারকারীদের রুট হিসেবে পরিচিত। নদী ও ঘন জঙ্গলে ঢাকা অঞ্চল হওয়ায় নজরদারি এড়িয়ে পালানো তুলনামূলক সহজ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে থাইল্যান্ড নজরদারি বাড়িয়ে দেয়—তাতেই ধরা পড়ে এই বড় চক্রটি।

থাই কর্মকর্তাদের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা “ঘনঘন অস্ত্র পাচার কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত” এবং তারা কয়েকটি অস্ত্র চালান মায়ানমারের অভ্যন্তরে পৌঁছে দেওয়ার পর পালিয়ে যাচ্ছিল।

🔶 অস্ত্র কোথায় যাচ্ছিল? রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর দিকে ইঙ্গিত

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চোরাচালান হওয়া অস্ত্র–গোলাবারুদ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছিল

মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাত, রোহিঙ্গা শিবিরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও আরাকান অঞ্চলে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ছোট-বড় উগ্রপন্থী দল অস্ত্র চাহিদা বাড়িয়েছে। সেই সুযোগেই সক্রিয় হয়েছে আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা।

তবে তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে এবং কারা এই চালানের মূল অর্থদাতা, কোন দেশ বা গোষ্ঠী জড়িত—তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

🔶 কেন পাকিস্তানি নাগরিকদের সংখ্যা এত বেশি?

গ্রেফতার হওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জন পাকিস্তানি, যা তদন্তকারীদের বিশেষভাবে কৌতূহলী করেছে। গত কয়েক বছরে পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন অস্ত্র পাচার–সম্পর্কিত মামলায় পাকিস্তানি নাগরিকদের নাম উঠে এসেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কিছু সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র ব্যবসার জন্য কুখ্যাত, এবং সেখানকার চক্রগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘাতপূর্ণ জায়গায় অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।

তবে থাই কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সঙ্গে বলছে—

Advertisements

“গ্রেফতার মানেই অপরাধ প্রমাণ নয়। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম ও নেটওয়ার্ক যাচাই করা হচ্ছে।”

🔶 গোটা অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ

মায়ানমার, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া—সমগ্র দক্ষিণ–দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে।

মায়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ, আরাকান অঞ্চলের উত্তেজনা, ককস বাজার–টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ে ওঠা অপরাধচক্র—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাদক ও অস্ত্র পাচারকারীদের সক্রিয়তা বাড়ছে।

তাই এই ঘটনার পর থাই কর্তৃপক্ষ এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও তথ্য বিনিময় জোরদার করেছে।

একজন থাই অফিসিয়াল জানান—

“আমরা শুধু পাচারকারীদের ধরা নয়, তাদের সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলতে চাই।”

🔶 মানবপাচার ও জঙ্গি যোগাযোগ—দুই দিকেই তদন্ত

প্রাথমিক তদন্তে দুটি বড় সম্ভাবনা উঠে এসেছে—

1️⃣ অস্ত্র পাচার

2️⃣ মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা

এই অঞ্চলের অনেক অপরাধচক্র অস্ত্র পাচার, মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা—সবই একসঙ্গে পরিচালনা করে। তাই গ্রেফতার ব্যক্তিরা কোন নেটওয়ার্কের অংশ, কারা তাদের আর্থিক সহায়তা দিত—সবই এখন তদন্তাধীন।

থাই অভিবাসন দপ্তরের প্রধান বলেন—

“আমরা ইন্টারপোল ও আঞ্চলিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছি।”

গ্রেফতার হওয়া ৩৬ জন বিদেশির মায়ানমার–থাইল্যান্ড সীমান্তে ধরা পড়া শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অস্ত্র পাচার সঙ্কটের ইঙ্গিত।

আঞ্চলিক অস্থিরতা, রোহিঙ্গা অঞ্চল, জিহাদি চক্র এবং পাকিস্তানি–দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্কগুলোর সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা তদন্তকে আরও জটিল করছে।

থাইল্যান্ড ইতিমধ্যেই পুরো ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং বড় ধরনের নেটওয়ার্ক ভাঙার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।