লন্ডনে গণেশ বিসর্জনের ভাইরাল ভিডিও,সংস্কৃতি ও পরিবেশ নিয়ে তীব্র বিতর্ক

লন্ডনের (London) একটি নদীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভক্তদের গণেশ বিসর্জনের (Ganesh Visarjan) একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা সংস্কৃতি ও পরিবেশের বিষয়ে তীব্র আলোচনার…

Viral Video of Ganesh Visarjan in London Sparks Debate Over Culture and Environment

লন্ডনের (London) একটি নদীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভক্তদের গণেশ বিসর্জনের (Ganesh Visarjan) একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা সংস্কৃতি ও পরিবেশের বিষয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এই ভিডিওটি ১৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ দেখেছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ভক্তরা গণেশ মূর্তি নদীতে বিসর্জন দিচ্ছেন। এই দৃশ্য কারো কাছে সংস্কৃতির একটি সুন্দর প্রকাশ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে, আবার কেউ কেউ এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গণেশ বিসর্জন (Ganesh Visarjan) গণেশোৎসবের সমাপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উৎসবের সময় ভক্তরা গণেশের মূর্তির পূজা করেন এবং বিসর্জনের মাধ্যমে তাঁকে বিদায় জানান। এই আচারে ভক্তরা হলুদ, কুমকুম এবং ফুল দিয়ে গণেশের পূজা করেন, এবং তারপর মূর্তিটি প্রবাহিত জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। এই রীতির পিছনে বিশ্বাস হলো, গণেশ পরের বছর আবার ফিরে আসবেন। তবে লন্ডনের (London) মতো একটি আন্তর্জাতিক শহরে এই রীতি পালন নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

   

সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদল ব্যবহারকারী এই আচারকে তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবনার একটি সুন্দর প্রকাশ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “এটি সংস্কৃতির একটি অপূর্ব প্রদর্শন। এটি প্রবাসে থাকলেও নিজের দেশের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।” তবে অন্যদিকে, অনেকে এই বিসর্জনের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, মূর্তি তৈরিতে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভারতের জলাশয়গুলো এইভাবে দূষিত হয়েছে, এখন আন্তর্জাতিক জলাশয়ও দূষিত করবেন না। বাড়িতে একটি টবের মধ্যে বিসর্জন দিয়ে পরিবেশ বাঁচান। এটাই সত্যিকারের মূল্যবান।”

অন্য একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “গণপতি বিসর্জনের জন্য এটি ভুল জায়গা। অন্তত প্লাস্টিক ও থার্মোকলের অলঙ্কারগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। এই রঙগুলো বিষাক্ত।” তবে একজন ব্যবহারকারী দাবি করেছেন যে মূর্তিটি মাটির তৈরি ছিল, এবং প্রশ্ন তুলেছেন, “লোকে কেন এতে আপত্তি করছে?” এছাড়াও, আরেকজন পরামর্শ দিয়েছেন, “অন্তত অলঙ্কারগুলো সরিয়ে ফেলুন, এগুলো হাঁস-মুরগির জন্য ক্ষতিকর এবং দূষণ ঘটায়।”

এই ঘটনা পরিবেশ সুরক্ষা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছে। ভারতে গণেশ বিসর্জনের (Ganesh Visarjan) সময় নদী ও জলাশয়ে দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় প্লাস্টার অফ প্যারিস, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক রঙ দিয়ে তৈরি মূর্তি জলে বিসর্জনের ফলে জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষতি হয়। তাই পরিবেশবিদরা বহু বছর ধরে পরিবেশবান্ধব মূর্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। মাটির মূর্তি এবং প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার এই সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে।

Advertisements

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

A post shared by Sandeep Anthwal (@sandeep_anthwal)

লন্ডনের (London) এই ঘটনা ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রবাসে থেকেও তারা তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। তবে বিদেশের মাটিতে এই ধরনের আচার পালনের সময় স্থানীয় পরিবেশ ও সংবেদনশীলতার বিষয়টিও বিবেচনা করা জরুরি। লন্ডনের (London) নদীতে বিসর্জনের এই ঘটনা পরিবেশ সচেতনতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।

এই বিতর্ক শুধুমাত্র লন্ডন (London) বা ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন। ভক্তরা যদি পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেন এবং বিসর্জনের সময় স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলেন, তাহলে এই ধরনের বিতর্ক অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। এই ঘটনা আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার এবং ধর্মীয় আচার পালনের পাশাপাশি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত, এই ভাইরাল ভিডিওটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রতিফলন নয়, বরং এটি আমাদের সমাজে সংস্কৃতি, ধর্ম এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বের একটি প্রতীক। ভবিষ্যতে এই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালনের সময় আরও সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া গেলে, তা সকলের জন্যই কল্যাণকর হবে।