জম্মু ও কাশ্মীরের নবগঠিত শ্রী মত বৈষ্ণোদেবী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এক্সেলেন্স (Vaishno Devi Medical College)–কে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কলেজটির প্রথম এমবিবিএস ব্যাচে মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিজেপি সরব হয়েছে এবং তারা মেধা তালিকা বাতিলের দাবি তুলেছে। বিজেপির অভিযোগ, মন্দিরের দান ও শাইন বোর্ডের অর্থে গড়ে ওঠা এই কলেজকে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য “ধর্মভিত্তিক অগ্রাধিকার” প্রদান করা উচিত।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, SMVDIME–এর প্রথম বর্ষে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪২টি গিয়েছে মুসলিম শিক্ষার্থীদের দখলে, বেশির ভাগই কাশ্মীর উপত্যকা থেকে। হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮টি আসন। বিজেপির অভিযোগ, এটি “মন্দিরের টাকায় গড়া প্রতিষ্ঠানে হিন্দুদের বঞ্চনা”।
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সুনীল শর্মার নেতৃত্বে একটি বিজেপি প্রতিনিধিদল লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, যেহেতু শ্রী মাত Vaishno Devi Shrine Board-এর অর্থে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত, তাই ভর্তি নীতিতে হিন্দু সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া ন্যায্য। তারা Shrine Board Act-এ সংশোধন এনে কলেজকে “মাইনরিটি ইনস্টিটিউশন” মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবও রাখে, যাতে ধর্মভিত্তিক ভর্তি সম্ভব হয়।
তবে প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভর্তি একেবারেই NEET-UG মেধার ভিত্তিতে হয়েছে এবং ধর্মকে কোনোভাবেই মানদণ্ড করা যায় না। SMVDIME একটি পাবলিক ফান্ডেড ইনস্টিটিউশন, ফলে সংবিধানের ১৪ ও ১৫ ধারায় ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ অনুমোদিত নয়।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বিজেপির দাবিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বরাদ্দকালে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছিল ধর্মভিত্তিক বরাদ্দের প্রশ্নই নেই। সব কিছু যদি ধর্মের ভিত্তিতে বিচার করা হয়, তাহলে কি কেন্দ্রীয় প্রকল্পও এক ধর্মের মানুষকেই দেওয়া হবে?” তিনি আরও বলেন, মেধার ভিত্তিতে কেউ বেশি নাম তুললে সেখানে অভিযোগ করার কিছু নেই।
কাশ্মীরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিজেপির দাবিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বলে সমালোচনা করেছে। পিপলস কনফারেন্স প্রধান সাজাদ লোন মন্তব্য করেছেন, “মেডিক্যাল সায়েন্সকে সাম্প্রদায়িক করার চেষ্টা বিপজ্জনক।” পার্টির সভাপতি আলতাফ বুখারি বলেছেন, “এই যুক্তি জিন্নাহর তত্ত্বকে মনে করায়।” তিনি সতর্ক বার্তা দেন এ ধরনের দাবি রাজ্যে উত্তেজনা ও বিভাজন বাড়াবে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীর উপত্যকার শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে NEET পরীক্ষায় ভালো ফল করছে, ফলে তাদের বেশি আসন পাওয়া স্বাভাবিক। তাদের মতে, ধর্মকে সামনে এনে মেধাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অযৌক্তিক। BOPEE কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে ভর্তির প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে নির্দেশিকা মেনে হয়েছে এবং ধর্মভিত্তিক কোনো বিকল্পই নেই।
SMVDIME–কে ঘিরে রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি হয়েছে। বিজেপি যেখানে “ধর্মীয় অনুভূতির সম্মান” বলছে, সেখানে কাশ্মীরের দলগুলো একে “সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালানো” বলে আখ্যা দিচ্ছে। বিতর্ক যে আরও বাড়বে, তা এখনই পরিষ্কার।
