হাইতিতে সশস্ত্র হিংসার প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, আগামী ৩০ দিনের জন্য হাইতিতে কোনো মার্কিন বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে না (US Suspends Flights)। সশস্ত্র গ্যাংদের গুলিতে স্পিরিট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে গুলি লাগায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
এই গুলিবর্ষণের ফলে একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট আহত হন। এটি এমন এক হিংসার অংশ যা হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের নতুন প্রধানমন্ত্রী আলিক্স দিদিয়ার ফিলস-এমের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়, যদিও এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাঝে সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গুলিবর্ষণ এবং বিমানবন্দরের অচলাবস্থা
সোমবার যখন স্পিরিট এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই সশস্ত্র গ্যাংদের গুলি গিয়ে লাগে। এ ঘটনার পরপরই পোর্ট-অ-প্রিন্সের বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। এপি-এর প্রাপ্ত ছবিতে দেখা গেছে, বিমানটির ভেতরে অসংখ্য বুলেটের ছিদ্র। বেশ কিছু বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট স্থগিত করেছে, যদিও কবে নাগাদ বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়।
হাইতির রাজধানীর অনেক অংশ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্কুল, ব্যাংক এবং সরকারি দপ্তরগুলো বন্ধ ছিল এবং রাস্তায় যানবাহনের চলাচল ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। শুধু একজন আহত মানুষকে মোটরবাইকের পেছনে কাতর অবস্থায় দেখা গেছে।
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদের, যিনি হাইতির অভিবাসন প্রসঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন, তিনি এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটি একটি সন্ত্রাসী কাজ, যারা হাইতির সহিংসতার বিরুদ্ধে সহায়তা দিচ্ছে, তাদের উচিৎ এই সশস্ত্র গ্যাংগুলোকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করা।”
হিংসার পটভূমি এবং রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকা
রাষ্ট্রসংঘের অনুমান অনুযায়ী, পোর্ট-অ-প্রিন্সের ৮৫ শতাংশ অংশ এখন গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণে। এই সহিংসতা মোকাবিলায় কেনিয়ার নেতৃত্বে একটি মিশন শুরু হলেও, তা পর্যাপ্ত অর্থ ও জনবলের অভাবে কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। হাইতিতে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
গ্যারি কনিলে, যিনি ছয় মাস ধরে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন, সম্প্রতি বরখাস্ত হয়েছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী আলিক্স দিদিয়ার ফিলস-এমে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এই আবহেই গ্যাংদের সহিংসতা যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সাধারণ জনগণের অসহায় অবস্থা
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ তাদের জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। ৪৩ বছর বয়সী মার্থা জিন-পিয়ের, যিনি প্রতিদিন তার পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে শহরের রাস্তায় সবজি বিক্রি করেন, জানান, “নতুন প্রধানমন্ত্রী আসলেও কী হবে, যদি নিরাপত্তা না থাকে, যদি আমি আমার জিনিসপত্র বিক্রি করতে না পারি?” তিনি আরও বলেন, “এটাই আমার ব্যাংক একাউন্ট, আমার পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে এটাতেই।”
আন্তর্রাষ্ট্রক প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কনিলে এবং ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের মধ্যে সহযোগিতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “হাইতির জনগণের বর্তমান প্রয়োজনীয়তাগুলো এতোই তীব্র যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে প্রশাসনিক কাজে মনোযোগ দিতে হবে।”
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্রাষ্ট্রক শক্তিগুলি হাইতির বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা এবং শীঘ্রই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।