মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে উঠছে ট্রাম্পের শুল্ক মামলা, বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা

মার্কিন আপিল আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ে (৭-৪ ভোটে) ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক (Trump tariffs) আরোপ কৌশল বড় ধাক্কা খেল। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট International Emergency Economic…

US Supreme Court to decide validity of Trump tariffs that remain in force till Oct 14

মার্কিন আপিল আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ে (৭-৪ ভোটে) ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক (Trump tariffs) আরোপ কৌশল বড় ধাক্কা খেল। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট International Emergency Economic Powers Act (IEEPA), 1977–এর আওতায় শুল্ক আরোপের ক্ষমতা রাখেন না। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপ করার একমাত্র সাংবিধানিক ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের হাতে নয়। এখন পুরো বিষয়টি গিয়ে ঠেকেছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা।

শুক্রবার মার্কিন ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের (US Court of International Trade) আগের রায়ই বহাল থাকছে। ওই আদালত গত ২৮ মে-তেই ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা শুল্ক অবৈধ ঘোষণা করেছিল। যদিও এই শুল্ক ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ, এর মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আপিল করতে পারবে।

   

ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক Global Trade Research Initiative (GTRI) জানিয়েছে, “এই আদালতের রায় গোটা বিশ্ব বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করবে—শুল্ক আরোপ কি কেবলমাত্র কংগ্রেসের আইন প্রণয়নের বিষয় থাকবে, নাকি প্রেসিডেন্টের ভূ-রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হবে।”

১৯৭৭ সালে গৃহীত IEEPA আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি জরুরি পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া। তবে আইনে ‘tariff’ বা ‘taxation’ শব্দের উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৯ সালে এবং পুনরায় ২০২৫ সালে এই আইন ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করে।

ট্রাম্প যুক্তি দেখান, মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি এবং চীন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে বেড়ে যাওয়া ফেন্টানিল প্রবাহ জাতীয় জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তাই তিনি ‘reciprocal tariff’ বা প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের অধিকার রাখেন। এর মাধ্যমে তিনি ভারতসহ ডজনখানেক দেশের আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক চাপান।

ফেডারেল সার্কিট কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী বাণিজ্য ও কর নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের হাতে। প্রেসিডেন্ট জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে এই আইনকে এভাবে প্রসারিত করতে পারেন না। ফলে ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।

ট্রাম্প শিবির অবশ্য এই রায় মানতে নারাজ। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আইনের অধীনে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফেডারেল সার্কিট আদালত প্রেসিডেন্টের বিদেশনীতি পরিচালনার সাংবিধানিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক মঞ্চে দুর্বল করছে। বিচার বিভাগ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।”

Advertisements

অন্যদিকে সমালোচকরা মনে করছেন, ট্রাম্প অতিরিক্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাদের মতে, যদি সুপ্রিম কোর্টও এই রায় বহাল রাখে, তবে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টরা আর সহজে ‘জরুরি আইন’ দেখিয়ে বাণিজ্য নীতি চাপিয়ে দিতে পারবেন না।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় রপ্তানির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষত স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টেক্সটাইল এবং কিছু কৃষিপণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্প বারবার ঘোষণা করেছেন, তাঁর নীতি হলো “tariff reciprocity”—অর্থাৎ যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর যত শুল্ক আরোপ করবে, আমেরিকাও সেই দেশের পণ্যের ওপর সমান শুল্ক বসাবে।

ভারতের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেয়, তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অস্থিরতা আরও বাড়বে। তবে আদালত যদি কংগ্রেসের ক্ষমতা বহাল রাখে, তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য তা স্বস্তির খবর হবে।

এখন সবার চোখ সুপ্রিম কোর্টের দিকে। অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—
প্রেসিডেন্ট কি IEEPA–র অধীনে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা রাখেন?
নাকি শুল্ক আরোপ কেবলমাত্র কংগ্রেসের অধীনস্থ আইন প্রণয়নের বিষয়?
GTRI বলেছে, “এই রায় শুধু আমেরিকার নয়, পুরো বিশ্বের বাণিজ্যনীতিকে প্রভাবিত করবে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের ক্ষমতার সীমারেখা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই কৌশল তাঁর রাজনৈতিক সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও আদালত একে সংবিধানের মূল নীতির পরিপন্থী বলে মনে করছে। এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্ট কোন পথে হাঁটে—প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতার প্রসার ঘটায়, নাকি কংগ্রেসের কর্তৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।