Student Visas to Be Revoked: আগামী দিনে আরও ছাত্র ভিসা বাতিলের হুমকি মার্কিন বিদেশমন্ত্রীর

আমেরিকায় আগামী দিনগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রদের ভিসা (Student Visas) বাতিল করতে চলেছে বলে ঘোষণা করেছেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও। শুক্রবার জি-৭ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের পর…

US Secretary of State Marco Rubio

short-samachar

আমেরিকায় আগামী দিনগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রদের ভিসা (Student Visas) বাতিল করতে চলেছে বলে ঘোষণা করেছেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও। শুক্রবার জি-৭ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। এই ঘোষণা এসেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলের গ্রেফতার ও আটকের পরিপ্রেক্ষিতে, যাকে ট্রাম্প প্রশাসন তার ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায়।

   

রুবিও বলেন, “আগামী দিনগুলিতে আপনারা দেখবেন আরও ভিসা বাতিল হচ্ছে। আমরা এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করছি, যাদের আমাদের দেশে কখনও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, মার্কিন সরকার বিদেশি ছাত্রদের মধ্যে যারা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে বা আন্দোলনে জড়িত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

মাহমুদ খলিল, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক ছাত্র এবং সিরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি, গত শনিবার মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) দ্বারা গ্রেফতার হন। তিনি গত বছর কলাম্বিয়া ক্যাম্পাসে গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। খলিল ছিলেন বিক্ষোভকারীদের একজন প্রধান মধ্যস্থতাকারী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাকে হামাসের সমর্থক হিসেবে অভিযুক্ত করেছে, যদিও তার আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলছিলেন।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খলিল “হামাসের সঙ্গে সংযুক্ত কার্যকলাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন,” যদিও তারা এই অভিযোগের বিস্তারিত প্রমাণ দেননি। খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তাকে লুইজিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে, নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালত তার বহিষ্কার স্থগিত করেছে এবং তার আইনজীবীরা এই গ্রেফতারকে স্বাধীন মত প্রকাশের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা দেখাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছিলেন যে, যেসব বিদেশি ছাত্র “জিহাদপন্থী” বা “হামাস সমর্থক” বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তাদের ভিসা বাতিল করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি বলেছিলেন, “২০২৫ সালে আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং বহিষ্কার করব।” খলিলের গ্রেফতারকে তিনি “অনেকের মধ্যে প্রথম” বলে উল্লেখ করেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই ধরনের আরও পদক্ষেপ আসতে চলেছে।

মার্কো রুবিও, যিনি সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন, এই নীতির একজন শক্ত সমর্থক। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “আমরা হামাস সমর্থকদের ভিসা এবং গ্রিন কার্ড বাতিল করব যাতে তাদের বহিষ্কার করা যায়।” তবে, এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলি। নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এই পদক্ষেপকে “মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছে।

খলিলের গ্রেফতারের পর নিউইয়র্কে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তারা এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিক দমন হিসেবে দেখছেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকরাও এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একজন অধ্যাপক বলেন, “এটি আমাদের বিশ্বাসের উপর আঘাত। বিদেশি ছাত্ররা এখানে এসে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে বলে ভরসা করে, কিন্তু এখন তাদের উপর হয়রানি করা হচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আমেরিকায় শিক্ষার জন্য আসা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করবে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি শুধু ফিলিস্তিনপন্থীদের জন্য, নাকি অন্যান্য আন্দোলনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে? এই নীতি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, কারণ মার্কিন সংবিধান সবাইকে মত প্রকাশের অধিকার দেয়।

মার্কো রুবিওর এই ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির একটি নতুন মোড় নির্দেশ করছে। মাহমুদ খলিলের ঘটনা হয়তো শুরু মাত্র। আগামী দিনে আরও ছাত্রদের ভিসা বাতিল হলে, এটি মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতি কীভাবে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।