‘পাকিস্তানকে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন ট্রাম্প? যা জানাল মার্কিন দূতাবাস

ওয়াশিংটন: দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহলে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল একটি খবর৷ শোনা যাচ্ছিল, পাকিস্তান নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নতমানের AIM-120 AMRAAM আকাশ-থেকে-আকাশে…

US Pakistan AMRAAM missiles

ওয়াশিংটন: দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহলে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল একটি খবর৷ শোনা যাচ্ছিল, পাকিস্তান নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নতমানের AIM-120 AMRAAM আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পাচ্ছে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই জল্পনা শুরু হয়, ইসলামাবাদের হাতে নতুন মারণাস্ত্র পৌঁছলে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশসীমায় শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

Advertisements

জল্পনায় ছেদ

কিন্তু শুক্রবার সকালে দিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতেই সেই জল্পনায় ছেদ পড়ল৷ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়ে দূতাবাস জানিয়েছে, “প্রকাশিত চুক্তির কোনও অংশই পাকিস্তানের জন্য নতুন মাঝারি পাল্লার অত্যাধুনিক আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র (AMRAAMs) সরবরাহের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।” অর্থাৎ, নতুন ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির খবর সম্পূর্ণ “ভুয়ো”।

বিজ্ঞাপন

তবে বিবৃতির পরবর্তী অংশেই ওয়াশিংটনের অবস্থান আরও সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, যে চুক্তিকে ঘিরে এত আলোচনা, সেটি মূলত “সাসটেইনমেন্ট অ্যান্ড স্পেয়ারস” প্রকল্প- যেখানে পাকিস্তান-সহ একাধিক দেশ যুক্ত রয়েছে। সহজ কথায়, এটি নতুন অস্ত্র বিক্রির নয়, বরং বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতি ও খুচরো যন্ত্রাংশ সরবরাহের অংশ।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকাশসীমায় উত্তেজনা US Pakistan AMRAAM missiles

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে পাকিস্তান হয়তো সম্প্রতি ব্যবহৃত বা পুরনো মিসাইলের পুনঃসংস্থান পাচ্ছে — যা অস্ত্র সরবরাহের প্রযুক্তিগত রূপান্তর নয়, বরং ব্যবস্থাগত রক্ষণাবেক্ষণ।

এই ব্যাখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ অল্প কিছুদিন আগেই অপারেশন সিঁদুর-এর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকাশসীমায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে উন্নত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হলে তা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর পদক্ষেপ হত।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার বহু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, পাকিস্তান নাকি মার্কিন AIM-120 AMRAAM মিসাইল পাচ্ছে, যা তার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বহরকে নতুন করে আধুনিকীকরণ করবে। ওই রিপোর্টগুলিই আঞ্চলিক নিরাপত্তা মহলে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছিল যে, ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের দিকে নতুন করে ঝুঁকছে।

চুক্তিটি কেবলমাত্র “সাসটেইনমেন্ট”-এর জন্য

কিন্তু সর্বশেষ বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তিটি কেবলমাত্র “সাসটেইনমেন্ট”-এর জন্য, যা একান্তই প্রযুক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প। ওয়াশিংটনের স্পষ্ট বার্তা — এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা কোনওভাবেই বাড়ছে না।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মূল্য প্রায় ৪১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রে’থিয়ন মিসাইলস অ্যান্ড ডিফেন্স সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে AMRAAM C-8 ও D-3 ভ্যারিয়েন্টের ধারাবাহিক উৎপাদনের দায়িত্ব, যা ২০৩০ সালের ৩০ মে-র মধ্যে সম্পন্ন হবে। এতে মোট চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা অন্তর্ভুক্ত করছে ৩০টিরও বেশি মিত্রদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা।

দূতাবাসের ভাষায়, “এই প্রকল্প কোনও নতুন অস্ত্র বিক্রির নয়, বরং অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রক্ষণাবেক্ষণমূলক অঙ্গ।”

ফলে একদিকে যেমন মার্কিন বিবৃতি দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক উত্তাপ কিছুটা প্রশমিত করেছে, অন্যদিকে তা স্পষ্ট করেছে — ওয়াশিংটন এখনো এই অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে অতি সতর্ক ও কৌশলগতভাবে সচেতন।