আগস্ট মাসে নির্ধারিত আমেরিকা-ভারত (US-India) বাণিজ্য আলোচনার ষষ্ঠ দফা আপাতত স্থগিত হতে চলেছে। শনিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল এ মাসে দিল্লি সফরে আসার কথা থাকলেও সেটি এখন সম্ভবত পিছিয়ে যাবে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি আধিকারিক পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “এই সফরটি পুনর্নির্ধারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
এই সিদ্ধান্ত এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণার পর। ট্রাম্প ভারতীয় আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক, যা রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতীয় তেলের কেনাকাটার প্রেক্ষিতে চাপানো হয়েছে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে এতদিনে মোট পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে। ষষ্ঠ দফার জন্য মার্কিন দলের ভারত সফরের কথা ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে বর্তমান ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যেতে চায়।
তবে আলোচনায় একাধিক বিতর্কিত বিষয় সামনে এসেছে। বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধশিল্পকে কেন্দ্র করে। মার্কিন পক্ষ ভারতীয় বাজারে অধিক প্রবেশাধিকার চায়, যাতে আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্য ও কৃষিজ পণ্য সহজে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে কোনওরকম আপস করা যাবে না। কৃষকদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুক্তি কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে চাপ বাড়ানো নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক মহলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার চাপ বাড়ারই প্রতিফলন এই বাড়তি শুল্ক। ফলে বাণিজ্য আলোচনা আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে গেল।
ভারত সরকারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “আমাদের কৃষক ও পশুপালকদের স্বার্থে আমরা কোনও আপস করব না। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনে আলোচনার পথ দীর্ঘ হবে।”
যদিও আলোচনার ষষ্ঠ দফা আপাতত স্থগিত হচ্ছে, তবুও উভয় দেশই চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রথম ধাপের চুক্তি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সূত্রের খবর, রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও শুল্ক চাপের মধ্যেও আলোচনার দরজা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হচ্ছে না। বরং কূটনৈতিক মহল আশাবাদী যে, সময় লাগলেও উভয় দেশই নতুন পথ খুঁজে বের করবে।
ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গত কয়েক বছরে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে গভীরতর হয়েছে। ফলে বাণিজ্য খাতে এই অচলাবস্থা দীর্ঘমেয়াদে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা কঠিন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, শেষ পর্যন্ত সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া অনিবার্য।