ট্রাম্প ভারতকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করছেন, দাবি মার্কিন বিশেষজ্ঞের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাশলি জে. টেলিস (Ashley J. Tellis) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Trump) ভারতকে আলাদা করে দোষারোপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ…

ট্রাম্প ভারতকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করছেন, দাবি মার্কিন বিশেষজ্ঞের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাশলি জে. টেলিস (Ashley J. Tellis) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Trump) ভারতকে আলাদা করে দোষারোপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টায় ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য ভারতকে একমাত্র দায়ী হিসেবে তুলে ধরা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টেলিস বলেন, “ভারতকে আলাদা করে দোষারোপ করা বন্ধ করুন। ইউক্রেন শান্তি আলোচনার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য শুধুমাত্র ভারত নয়, আরও অনেকে দায়ী। ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার জন্য ভারত একমাত্র কারণ নয়।”

ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করার কারণে এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ভারত রাশিয়া থেকে ৫২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তেল আমদানি করেছে। তবে চীন ৬২.৬ বিলিয়ন ডলারের তেল কিনে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে রয়ে গেছে।

   

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো (Peter Navarro) যুদ্ধকে “মোদীর যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর দাবি, “শান্তির পথ আংশিকভাবে দিল্লির মধ্য দিয়ে যায়”। নাভারোর বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প সরকার ভারতের প্রতি চাপ বাড়াচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এই দৃষ্টিভঙ্গি একপাক্ষিক এবং অযৌক্তিক।

অ্যাশলি টেলিস আরও বলেন, “মোদী বা ট্রাম্প কেউই ইউক্রেনে শান্তি আনতে পারবেন না, যতক্ষণ না প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। পুতিন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কথায় যুদ্ধ বন্ধ করবেন না।”

Advertisements

আগস্ট মাসে আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠক হয়। এরপর হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। ট্রাম্প আশা করেছিলেন যে পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে প্রথমে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে এবং পরে তাঁর উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আলোচনার এজেন্ডা এখনও প্রস্তুত নয়, আর ইউক্রেনের অভিযোগ, মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে বৈঠক বিলম্ব করছে।

মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রকাশ্যে পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি অত্যন্ত হতাশ। আমরা এমন কিছু করব যা মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার প্রতি সরাসরি চাপ তৈরি করার পাশাপাশি ভারতের উপর অযথা রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ বাড়াচ্ছে। টেলিসের মন্তব্য মার্কিন নীতির মধ্যে ভারসাম্যের অভাব তুলে ধরেছে। ভারত ও চীন উভয়ই রাশিয়ার তেলের বড় ক্রেতা হলেও, ট্রাম্প বারবার ভারতের ভূমিকার উপর জোর দিচ্ছেন। ফলে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক আরও চাপের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।