ইরানে আমেরিকার হামলা, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে

অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিল আমেরিকা। রবিবার সকালে ইরানের (Iran) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্রে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করেছে আমেরিকান সেনা।…

Iran missile

অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিল আমেরিকা। রবিবার সকালে ইরানের (Iran) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্রে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করেছে আমেরিকান সেনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই হামলার কথা প্রকাশ্যে জানান। তাঁর দাবি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামাতেই এই পদক্ষেপ।

এই ঘটনার পরে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, এই হামলার পরপরই ইরান আমেরিকার পশ্চিম এশিয়ায় থাকা একাধিক সামরিক ঘাঁটি এবং ইজ়রায়েলের উপর পাল্টা আঘাত হানার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

   

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ইজ়রায়েল ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্র ও মিলিটারি বেসে আচমকা বিমান হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের একাধিক শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী ও সেনা অফিসার নিহত হন। তখনই ইরান দাবি করে, তারা এখনো কোনও পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ শুরু করেনি, বরং গবেষণার অংশ হিসেবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।

ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র না বানাতে পারে, সে কারণেই হামলা চালানো হয়েছে। যদিও ইউএস ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স ডিরেক্টর তুলসী গাবার্ড মার্চ মাসেই বলেছিলেন, ইরান ইউরেনিয়াম জমা রাখলেও, পরমাণু বোমা তৈরির মতো কোনও তথ্য মেলেনি।

তার মধ্যেই আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হলেও, ইজ়রায়েলের এই আগ্রাসী পদক্ষেপ ও পরে আমেরিকার প্রত্যক্ষ বোমা হামলা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।

তেহরানের দক্ষিণে পর্বতঘেরা এলাকায় মাটির নিয়েছে রয়েছে ইরানের ফোরদো পরমাণুকেন্দ্র। ইউকে এবং ফ্রান্সের মধ্যে চ্যানেল টানেল মাটির যত গভীরে রয়েছে, তার চেয়েও বেশি গভীরে ইরানের এই পরমাণুকেন্দ্র বলে মনে করা হয়। মাটির গভীরে ঢুকে আঘাত হানার ক্ষমতা যে সমস্ত বোমার রয়েছে তা কেবলমাত্র আমেরিকার কাছেই রয়েছে। ইজ়রায়েলের কাছেও অত উন্নত অস্ত্র নেই। সে জন্যই ইরানের পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে আমেরিকার কাছে আর্জি জানাচ্ছিলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী।

Advertisements

বিস্ফোরক বোমা: GBU-57 ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর
ইরানের ভূগর্ভস্থ ফরদো পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে আমেরিকা ব্যবহার করেছে ‘GBU-57’ নামের বিশেষ ধরনের বোমা, যা প্রায় ১৩ হাজার কেজি ওজনের। এই বোমা কংক্রিটের ১৮ মিটার এবং মাটির ৬১ মিটার গভীরে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। সূত্রের দাবি, ফরদোর পরমাণুকেন্দ্র মাটির ৮০–৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই হামলায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে।

ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, “এই অপারেশন ছিল সম্পূর্ণ সফল” এবং “ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোকে বড়সড় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে”। তবে তেহরানের দাবি, হামলার আগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

এই ঘটনার পর পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাতের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। ইরান ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, শুধু ইজ়রায়েল নয়, মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও এবার তাদের নিশানায়। ইজ়রায়েল নিজেদের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।

বিশ্ব রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে রাশিয়া, চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত শক্তিধর দেশগুলির কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা এখনো পরিস্কার নয়।

এই ঘটনার ফলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, ইরান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ। আমেরিকা ও ইরানের এই সংঘর্ষ ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নিতে পারে। আন্তর্জাতিক কূটনীতির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এই উত্তেজনাকে যুদ্ধবিহীন পথে থামানো। না হলে গোটা পশ্চিম এশিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে, যার প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়বে।