ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিশানাভেদী হামলা ঘিরে টালমাটাল আন্তর্জাতিক কূটনীতি। রবিবার রাতের পরপর বিমান হানায় ‘মারাত্মক ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করলেন মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষায়, “ধ্বংসাত্মক বলা যথার্থ হবে। বুলসআই!”
বিশাল ক্ষতি
Truth Social-এ দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “Monumental damage” হয়েছে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে। বিশেষ করে ফরডো সাইটে, যা পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মাটির অনেক নিচে।”
জানা গিয়েছে, ফরডো পারমাণবিক কেন্দ্রে ছ’টি GBU-57 Massive Ordnance Penetrator (MOP) বোমা নিক্ষেপ করে মার্কিন বাহিনী। এই বোমাগুলি ভূগর্ভস্থ শক্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ফরডো ছাড়াও নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান-এই তিন প্রাথমিক পারমাণবিক কেন্দ্র। ট্রাম্প দাবি করেন, “আমরা আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন করেছি… সমস্ত বিমান নিরাপদে দেশে ফিরছে।”
“ধ্বংসস্তূপে” ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি: দাবি পেন্টাগনের US Attack Iran Nuclear Sites
পেন্টাগনে সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দিয়েছি।” এই হামলাকে “সম্পূর্ণ সফল” বলেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ইরান, সতর্কবার্তা খামেনেইয়ের
হামলার পাল্টা জবাবে রণং দেহি ভঙ্গিতে মাঠে নামল ইরান। শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই বলেন, “শত্রুরা বড় ভুল করেছে। তার শাস্তি চলছে, চলবে।” ইতিমধ্যেই ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ভিতরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর মিলেছে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এই হামলাকে “প্রকাশ্য আগ্রাসন” বলে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন।
রুশ-চিনের নিন্দা, মোদির উদ্বেগ, নেতানিয়াহুর স্বাগত বার্তা
রাশিয়া, চিন ও সৌদি আরব কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে আমেরিকার এই পদক্ষেপের। অন্যদিকে, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে “সাহসী পদক্ষেপ” বলে সমর্থন জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত হওয়া দরকার। বৃহত্তর সংঘাত গোটা অঞ্চলের স্থিতাবস্থাকে ভেঙে দিতে পারে।”
রাষ্ট্রসংঘে ইরানের অভিযোগ: ‘কূটনীতি ধ্বংস করেছে আমেরিকা’
ইরানের রাষ্ট্রসংঘে রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “আমেরিকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারা নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিকে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করেছে।” ইরান নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবিও জানিয়েছে।
কী বোঝাচ্ছে এই হামলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রায় পশ্চিমি শক্তির প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপে উত্তপ্ত ইরান। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে, এমনটাই আশঙ্কা কূটনৈতিক মহলের।