US ambassador to India
ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ভারতের জন্য মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সের্জিও গর মার্কিন সেনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারত–আমেরিকা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে ব্যক্তিগত ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ।
গর বলেন, “আমাদের প্রেসিডেন্টের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে একটি বিশেষ এবং গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। এটি একেবারেই অনন্য।” তাঁর দাবি, এই ব্যক্তিগত রসায়ন শুধু দুই নেতার সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ফলে ভারত ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কের আলাদা গুরুত্ব
বিগত কয়েক বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক মতবিরোধে জড়ালেও মোদির ক্ষেত্রে তিনি একেবারে ভিন্ন মনোভাব দেখিয়েছেন। সের্জিও গর এ প্রসঙ্গে বলেন, “যখন ট্রাম্প অন্যান্য দেশের নেতাদের শুল্কনীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন, তখনও তিনি সবসময় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মধ্যে এক অসাধারণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধু ব্যক্তিগত প্রশংসায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারত একটি অপরিহার্য শক্তি এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো এখন কৌশলগত অগ্রাধিকার।
শুল্ক নিয়ে ‘দূরত্ব খুব বেশি নয়’ US ambassador to India
বর্তমানে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রধান বাণিজ্যিক সমস্যার একটি হলো শুল্ক আরোপ। ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক এবং পাল্টা আমেরিকার চাপা অসন্তোষ বহুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। তবে গরের বক্তব্যে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তিনি বলেন, “দুই দেশই আসলে খুব বেশি দূরে নয় একটি বাণিজ্য চুক্তি থেকে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
এর মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চাপ দিচ্ছে ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য, কারণ তারা এখনও রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। তবে গরের মতে, ভারতের ক্ষেত্রে সমাধানের পথ দ্রুতই তৈরি হবে।
রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে চাপ
সের্জিও গর তাঁর বক্তব্যে আরও স্পষ্ট করেন যে, ভারতকে রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাজি করানো এখন হোয়াইট হাউসের অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক লক্ষ্য। তিনি বলেন, “ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা থেকে বিরত করানো এই প্রশাসনের শীর্ষ অগ্রাধিকার।” তবে একইসঙ্গে তিনি জানান, আমেরিকা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গরের ভাষায়, “আমি মনে করি, সময় খুব বেশি দূরে নয়—আগামী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা এই বিষয়ে সঠিক সমাধান খুঁজে পাব।”
শান্তি প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক উদ্যোগ
শুধু ভারত নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক এজেন্ডার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন গর। তিনি উল্লেখ করেন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাত নিরসনে মার্কিন প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। গরের মতে, “বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা এই প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। আর এই উদ্যোগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত।”
ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্র এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তির সহযোগিতা আমেরিকার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমেরিকা–ভারত সম্পর্ক শুধু কৌশলগত নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য।
বিশেষজ্ঞদের মত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, সের্জিও গরের এই মন্তব্য ভারত–আমেরিকা সম্পর্ককে নতুন করে জোরদার করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার প্রধান লক্ষ্য হলো ভারতকে আরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পাশে পাওয়া। তবে ভারতের পক্ষে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয়, কারণ ঐতিহাসিকভাবে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতা গভীর।
অন্যদিকে, বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে সমাধান হলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই আমেরিকান কোম্পানিগুলিও ভারতের বিশাল বাজারে আরও সহজে প্রবেশাধিকার পাবে। ফলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শেষ কথা
সেনেটের সামনে দেওয়া সের্জিও গরের বক্তব্য ভারত–আমেরিকা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করেছে। ট্রাম্প-মোদির ব্যক্তিগত বন্ধুত্বকে সামনে রেখে তিনি একদিকে যেমন দ্রুত বাণিজ্য সমাধানের আশা দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা কমাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
বিশ্ব রাজনীতির এই অস্থির সময়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক যদি আরও সুদৃঢ় হয়, তবে তা শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক বার্তা হয়ে উঠবে।
World: Donald Trump’s nominee for US Ambassador to India, Sergio Gor, testified before the Senate Foreign Relations Committee. He highlighted the special relationship between Trump and PM Modi, and discussed key issues like resolving trade disputes and reducing India’s reliance on Russian oil.