বিশ্বজুড়ে নারী বৈষম্য চরমে? অবাক করা রিপোর্ট UNESCO র

unesco-girls-education-gender-equality-report

বিশ্বজুড়ে নারী শিক্ষার প্রসারে নানা পদক্ষেপ ও নীতিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও, আজও ১৩৩ মিলিয়ন মেয়ে শিশুর স্কুলে যাওয়া হয় না। ইউনেস্কোর সর্বশেষ প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বেইজিং ঘোষণার তিন দশক পরও পূর্ণ শিক্ষাগত লিঙ্গসমতা এখনও অধরা। যদিও প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মেয়েদের উপস্থিতি বেড়েছে বহু গুণ, তবু অঞ্চলভেদে বৈষম্য, নেতৃত্বে নারীদের অনুপস্থিতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় লিঙ্গবৈষম্যের নানা রূপ এখনও রয়ে গেছে।

Advertisements

H-1B ভিসা ফি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল, ভারতীয় ছাত্র-প্রফেশনালদের জন্য স্বস্তির বার্তা

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে মেয়েদের ভর্তি হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় এখন ৯১ মিলিয়ন বেশি মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, আর মাধ্যমিকে ১৩৬ মিলিয়ন মেয়ের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এমনকি উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৯ মিলিয়ন। এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আশার, কিন্তু এখনও বৈষম্যের পাহাড় কাটেনি।

মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়ে-ছেলেদের অংশগ্রহণ এখন প্রায় সমান, কিন্তু সাব-সাহারান আফ্রিকায় ছবিটা একেবারে উল্টো। সেখানে এখনও বিপুল সংখ্যক মেয়ে শিশু স্কুলের বাইরে। ওশেনিয়ার দেশগুলোতেও মেয়েদের শিক্ষার হার কমেছে, অন্যদিকে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ছেলেরা বরং মাধ্যমিক স্কুলে টিকতে পারছে না।

গরিবি, গ্রামীণতা এবং সামাজিক প্রথা এই বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গিনি ও মালি’র মতো দেশে আজও স্কুলে যাওয়া মেয়ে শিশুর সংখ্যা হাতে গোনা। এমনকি যারা স্কুলে যাচ্ছে, তারাও মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না।

ইউনেস্কো জানাচ্ছে, বিশ্বের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ দেশে প্রাথমিক স্তরে যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক, এবং মাধ্যমিক স্তরে এই হার তিন-চতুর্থাংশ। অনেক দেশের পাঠ্যবই আজও লিঙ্গ-ধারণা ও সামাজিক ভূমিকার সীমাবদ্ধতা শেখায়, ফলে শিক্ষা প্রকৃত অর্থে সমতার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারছে না।

Advertisements

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা সংখ্যায় বেশি হলেও নেতৃত্বে তাঁদের অংশীদারিত্ব আশঙ্কাজনকভাবে কম। ইউনেস্কো বলছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে মাত্র ৩০ শতাংশ নেতৃত্বের পদে নারী রয়েছেন। ফলে শিক্ষা এখনও নারীর ক্ষমতায়নের সম্পূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারেনি।

এই অবস্থার পরিবর্তনে ইউনেস্কো সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লিঙ্গ-সংবেদনশীল পাঠ্যক্রম চালু করা, নারী নেতৃত্বের পথ প্রশস্ত করা, যৌনতা শিক্ষা সম্প্রসারণ করা এবং স্কুলে লিঙ্গভিত্তিক হিংসা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

পাশাপাশি, শিক্ষা নীতিতে বাস্তব তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর জোর দিয়ে টেকসই উন্নয়নের পথ গড়ার কথাও বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়েদের শিক্ষা কেবল একটি মানবাধিকার নয় এটি সমাজ ও অর্থনীতির ভবিষ্যতের বিনিয়োগ। নারী শিক্ষার বিস্তারে কর্মসংস্থান বাড়ে, দারিদ্র্য কমে এবং সামাজিক সমতা দৃঢ় হয়।

তিন দশক আগে বেইজিং ঘোষণায় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল শিক্ষায় সম্পূর্ণ লিঙ্গসমতা অর্জনের তা এখনও বাস্তবায়িত না হলেও আশার আলো নিভে যায়নি। ইউনেস্কোর বক্তব্যে স্পষ্ট, এখনই পদক্ষেপ না নিলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পিছিয়ে পড়বে। আর পদক্ষেপ নিলে একটি শিক্ষিত, সমানাধিকারভিত্তিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বিশ্ব তৈরি করা সম্ভব।