ইজরায়েলের অনীহা সত্বেও আমেরিকার যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে সায় রাষ্ট্রপুঞ্জের

গাজা সমস্যার সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনা যুদ্ধা বিরতি প্রস্তাবে সমর্থন জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এই ইস্যুতে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের…

গাজা সমস্যার সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনা যুদ্ধা বিরতি প্রস্তাবে সমর্থন জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এই ইস্যুতে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে ১৪ টি দেশ। তবে স্বভাবতই রাশিয়া এই ভোটাভুটি থেকে নিজেকে বিরত রাখে। এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ছাড়াও হামাসের হাত থেকে ইজরায়েলি বন্দি মুক্তি ও প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইজরায়েলও সম্প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলে একটি টেলিভিশন সাক্ষাতকারে এমনটাই বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গাজা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিগত কয়েকমাস ধরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছিল তেল আভিভ। আর গোটা বিষয়তে সমন্বয় সাধনের কাজ করেছে মিশর ও কাতারের মতো মধ্যপ্রাচ্য়ের দুটি প্রভাবশালী দেশ। তবে জটিলতা এখনও কাটেনি। মার্কিন চাপ থাকলেও ইজরায়েলের অতি দক্ষিণপন্থী মন্ত্রীসভার সদস্যরা এখনও এই প্রস্তাব মানবেন কিনা তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট করেনি।

গাজা যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবের ব্ল প্রিন্ট তৈরি করতে গত কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। একাধিক বার কাতারে গিয়ে সেদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আবার মিশরের আবদেল আল সিসি প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেও পরিস্থিতির সমাধান সূত্র বের করতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের আগে ব্লিঙ্কন বলেন, “যুদ্ধ বিরতি চাইলে হামাসকেও বন্দি ইজরায়েলিদের মুক্তি দিতে হবে।”

   

যদিও প্রথমে পশ্চিমী দেশগুলির প্রস্তাব মানতে রাজি ছিল না প্যালেস্টাইনের উগ্রবাদী সংগঠন হামাস। তবে গত অক্টোবর থেকে চলা এই মারাত্মক লড়াইয়ে ক্ষতির পরিমান বেড়েছে বিপুল পরিমানে। প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের। ফলে এদিন নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস নেতৃত্ব। তবে পুরনো দাবিতে এখনও অনড় তাঁরা, গাজাতে সম্পূর্ন যুদ্ধ বিরতি চালু করতে হবে, পাশাপাশি গাজা ভূখন্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে নেতানিয়াহুকে। তারপরেই মধ্যস্থতাকারী দেশগুলির মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে বলে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আমেরিকার আনা এই প্রস্তাবে কতগুলি স্তর রয়েছে। প্রথমে,দু পক্ষকেই নিজেদের বন্দী প্রত্যর্পণ করতে হবে। তখন অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধ বিরতি জারি রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, গাজা থেকে ইজরায়েলকে স্থায়ী ভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। যদিও এই বিষযটি নিয়ে এখনও ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি বাইডেন-নেতানিয়াহু প্রশাসন। আর তৃতীয়র,গাজাতে দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তিস্থাপন করা যায়। এদিন এক্স হল্যান্ডেলে পোস্ট করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “প্রস্তাবটিতে বহুদেশ রাজি হলেও এখনও নেতানিয়াহু রাগি হন নি। “

রাষ্ট্রপুঞ্জের মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস বলেন,” শান্তির জন্য ভোটদান হল। ” অন্যদিকে, ব্রিটিশ বিদেশ সচিব ডেভিড ক্যামেরনও এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গাজায মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলছে ব্যপক প্রতিবাদ-আন্দোলন। যারফলে নির্বাচনের আগেই ঘরেই বেকায়দায় পড়তে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। সুতরাং ঘরে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়া এড়াতে গাজা সমস্যার সমাধানে মরিয়া হয়ে উঠেছে হোয়াইট হাউস। তাই বাইডেন-ব্লিঙ্কনদের সক্রিয়তা এমনই ইঙ্গির দিচ্ছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক মহলের।