কাশ্মীরের উত্তেজনা প্রশমনে ময়দানে রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব

রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (UN Chief Antonio Guterres) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে “সর্বোচ্চ সংযম” প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।…

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল ২০২৫) জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও সংঘটিত একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় (Pahalgam Terror Attack) কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (UN Chief Antonio Guterres) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে “সর্বোচ্চ সংযম” প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল ২০২৫) জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও সংঘটিত একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় (Pahalgam Terror Attack) কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই আহ্বান জানানো হয়েছে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি ফ্রন্ট সংগঠন। রাষ্ট্রসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বৃহস্পতিবার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে সংঘটিত জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি না হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”

   

হামলার বিবরণ ও প্রভাব

পহেলগাঁওর বাইসারান মেডোতে এই হামলা সংঘটিত হয়, যা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হামলাকারীরা পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়েছিল। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিক ছাড়া বাকিরা সবাই ভারতীয়। এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হামলার পর ভারত সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর হ্রাস করা হয়েছে, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয়েছে, ভিসা পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে এবং ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে।

রাষ্ট্রসংঘের অবস্থান

রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব গুতেরেস এই হামলাকে “সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে এবং পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ডুজারিক বলেন, “এটি আমাদের সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বানের অধীনে পড়ে। আমরা এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের বিরুদ্ধে যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।” তিনি আরও জানান, গুতেরেস এই হামলার পর থেকে ভারত বা পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামলার পর বিশ্ব নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স-এ লিখেছেন, “কাশ্মীর থেকে আসা গভীর উদ্বেগজনক খবর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং গভীর সমবেদনা।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক্স-এ বলেন, “ভারতে সংঘটিত একটি জঘন্য জঙ্গি হামলা। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি।” যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, “কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা সম্পূর্ণ বিধ্বংসী।” কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

Advertisements

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলাকে “ভারতের আত্মার উপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছেন এবং হামলাকারীদের “পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে” বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বিহারের মধুবনীতে একটি জনসভায় বলেন, “সন্ত্রাসবাদ অশাস্ত্রীয় থাকবে না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সব প্রচেষ্টা করা হবে।” ভারত সরকার পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করা, সার্ক ভিসা স্কিম বাতিল করা, পাকিস্তানি সামরিক কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং আটারি স্থল সীমান্ত বন্ধ করা। এছাড়া, ১৯৬০ সালের ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের কৃষি খাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

পাকিস্তানের অবস্থান

পাকিস্তান এই হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “এই সহিংসতা স্থানীয় উৎস থেকে উদ্ভূত এবং আমাদের এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।” পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার বলেন, “ভারতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যদি তাদের কোনো প্রমাণ থাকে, তবে তা উপস্থাপন করা উচিত।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একটি বৈঠক ডেকেছেন, যেখানে ভারতের পদক্ষেপকে “অপরাধমূলক” বলে অভিহিত করা হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রতিক্রিয়া

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে “নৃশংস এবং অমানবিক” বলে নিন্দা জানিয়েছেন এবং একটি সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেছেন। তিনি বলেন, “এই হামলা কাশ্মীরের পরিচয়ের উপর আঘাত।” রাজ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে।

পহেলগাঁও হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রসংঘের আহ্বান সত্ত্বেও উভয় দেশের কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো অত্যন্ত জরুরি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।