কিয়েভ: ইউক্রেন(Ukraine)-রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেনের বিশেষ স্নাইপার ইউনিট “Pryvyd” বা “ভূত” দাবি করেছে, তারা বিশ্বের দীর্ঘতম দূরত্ব থেকে স্নাইপার শটের রেকর্ড গড়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা দুই রুশ সেনাকে এক গুলিতেই হত্যা করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম ডিফেন্স এক্সপ্রেস জানিয়েছে, শটটি ছোঁড়া হয়েছিল ইউক্রেন-নির্মিত ১৪.৫ মিমি “অ্যালিগেটর” রাইফেল থেকে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে লক্ষ্য নির্ধারণে।
ঘটনাটি ঘটে ১৪ আগস্ট, ডোনেৎস্ক অঞ্চলের পোক্রোভস্ক শহরের কাছে। ইতিমধ্যেই সেই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেনীয় সেনা ওই “ঐতিহাসিক শট” ছোঁড়েন। যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই এই ঘটনার গুরুত্ব অসীম বলে মনে করছে সামরিক মহল।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন উপমন্ত্রী আন্তন গেরাশচেঙ্কো নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) প্রোফাইলে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন:
“ইউক্রেনের Pryvyd (Ghost) গ্রুপের একজন স্নাইপার প্রথমবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ইতিহাসের সফলতম শটটি সম্পন্ন করেছেন। এই অভিযানে দুই রুশ সেনাকে নির্মূল করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, এই বিশেষ শটটি ছোঁড়া হয়েছিল ড্রোন সিস্টেমের সহায়তায়, যা শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ধারণ করে। রাইফেলের সঙ্গে যুক্ত ছিল ইউক্রেন-নির্মিত থার্মাল ইমেজিং সাইট, যা অন্ধকারে বা ধোঁয়াশার মধ্যেও লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করে।
গত বছর, নভেম্বর ২০২৩-এ ইউক্রেনেরই অভিজ্ঞ স্নাইপার ভিয়াচেসলাভ কোভালস্কি (৫৮) ৩.৮ কিমি দূর থেকে রুশ সেনাকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। তিনি ব্রিটেন-নির্মিত Horizon’s Lord রাইফেল ব্যবহার করেছিলেন। সেটাই তখন পর্যন্ত ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম নিশ্চিত স্নাইপার কিলের রেকর্ড। এবার ৪ কিমি দূরের এই শট সেই রেকর্ড ভেঙে দিল।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ ইউরি বুতুসভ জানান, গুলিটি জানালার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে যেখানে রুশ সেনারা দাঁড়িয়ে ছিল। অর্থাৎ গুলি শুধু দূরত্বেই নয়, নির্ভুলতায়ও ইতিহাস তৈরি করেছে।
“অ্যালিগেটর” রাইফেল মূলত বড় আকারের যন্ত্রপাতি অক্ষম করার জন্য ডিজাইন করা হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে তা স্নাইপার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ক্যালিবার: ১৪.৫ মিমি
গতি: প্রতি সেকেন্ডে ৩,২১৫–৩,২৮১ ফুট
ওজন: প্রায় ২৫ কেজি
কার্যকরী পাল্লা: প্রায় ১.২ মাইল (প্রায় ২ কিমি), তবে দক্ষ ব্যবহারে তারও দ্বিগুণ দূরত্বে প্রাণঘাতী প্রমাণিত হতে পারে।
উৎপাদক সংস্থা: খারকিভ-ভিত্তিক XADO-Holding
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাইফেল সাধারণত শত্রুর হালকা সাঁজোয়া যান, রাডার বা অস্ত্র সিস্টেম অকেজো করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি, বিশেষত ড্রোন ও AI নির্দেশনার কারণে এই অস্ত্রের প্রাণঘাতী ক্ষমতা আরও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা শুধু একটি রেকর্ড নয়, ভবিষ্যতের যুদ্ধকৌশলেরও নমুনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ড্রোন মিলিয়ে যে সমন্বিত যুদ্ধপ্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে, তা আগামী দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আনতে চলেছে।
ইউক্রেন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ে নানা রকম নতুন কৌশল ও অস্ত্র ব্যবহার করছে। “ভূত” ইউনিটের এই শট শুধু ইউক্রেনের সেনাদের মনোবল বাড়াবে না, বিশ্ব সামরিক ইতিহাসেও স্থান করে নেবে।