যুদ্ধবিরতি! ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মতি জেলেনস্কির, পুতিন কি মেনে নেবেন?

ওয়াশিংটন: তিন বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, অবশেষে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর, আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী…

short-samachar

ওয়াশিংটন: তিন বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, অবশেষে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর, আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়। আমেরিকা জেলেনস্কির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তারা এখন রাশিয়াকেও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানাতে চাপ দেবে। তবে, এখন রাশিয়া কি প্রতিক্রিয়া দেয়, সেই দিকেই সকলের নজর রয়েছে৷ কারণ তাদের সিদ্ধান্ত শান্তির পথে বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে৷ 

   

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মতি জানিয়েছে৷ আমরা আশা করি, রাশিয়াও এতে সম্মতি জানাবে। দুই দেশেই বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত।” তিনি আরও জানান, তিনি শীঘ্রই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

মার্কিন চাপ ও ইউক্রেনের অবস্থান পরিবর্তন:

এটি ইউক্রেনের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক পরিবর্তন। গত মাসে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছিল, যেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। সেই সময়, ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেন এবং সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন। কিন্তু, সেই পরিস্থিতি পরবর্তীতে বদলাতে থাকে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজের অবস্থান পুনঃমূল্যায়ন করেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য রাজি হন।

মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার বলেন, “ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্ত একটি বড় পদক্ষেপ। এটি শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আতিথেয়তায় এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে, আমরা এখন ইউক্রেনের জন্য টেকসই শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি।”

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া:

এখন প্রশ্ন হল, রাশিয়া এই প্রস্তাবে সম্মতি জানাবে কিনা। ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টা দলের আশা, রাশিয়া দ্রুত সম্মতি জানাবে। তবে, যদি রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ট্রাম্প বলেন, “যদি রাশিয়া ‘না’ বলে, তবে আমরা জানব, শান্তির পথে আসল প্রতিবন্ধকতা কোথায়।”

এদিকে, ইউক্রেনের রাজধানী কিভে রাশিয়ার হামলা এখনও বন্ধ হয়নি। সোমবার রাতভর বিমান হামলা চালানো হয় এবং মঙ্গলবার রাতে পাল্টা ড্রোন হামলা চালানো হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এটি ইউক্রেনের তরফে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা। এমন পরিস্থিতিতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য রাশিয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পুতিনের প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধের ভবিষ্যত

এখন, বিশ্বের দৃষ্টি রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। যদি রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তবে এটি ইউক্রেনের জন্য শান্তির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হবে। তবে, যদি রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত নির্ভর করছে পুতিনের সিদ্ধান্তের উপর। বিশ্বের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়।