UK Politics: অস্তিত্ব সংকটে ব্রিটিশরা? ভারতীয় ঋষি প্রধানমন্ত্রী আর পাকিস্তানি সাদিক মেয়র

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: এ দেশে এক ঘরেই ভারতীয় ও পাকিস্তানি থাকেন। সীমান্তের সংঘর্ষে, যুদ্ধে তাঁদের মনে দাগ ধরে। তবে কাজের চাপে একসাথে থাকার বৈরিতা আসেনা। লুধিয়ানার…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:
এ দেশে এক ঘরেই ভারতীয় ও পাকিস্তানি থাকেন। সীমান্তের সংঘর্ষে, যুদ্ধে তাঁদের মনে দাগ ধরে। তবে কাজের চাপে একসাথে থাকার বৈরিতা আসেনা। লুধিয়ানার হরভজন সিং ও লাহোরের শোয়েব আখতারের মতো হাজার হাজার এমন উদাহরণ মহানগর লন্ডন শহর ছাড়িয়ে দূরবর্তী কোনও মফ:স্বলে মিলে যাবে। এরা সবাই ব্রিটেনে থাকা ভারতীয়-পাকিস্তানি। কেউ বা দীর্ঘ সময় থেকে দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অথবা তাদের আগের প্রজন্ম ব্রিটেনে (UK) থাকার সুবাদে স্ব-স্ব দেশের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হয়েছেন। যেমন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক (Rishi Sunak) ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান (Sadiq Khan)

ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী-সাদিক খান লন্ডনের মেয়র

ব্রিটিশদের হলটা কী? তারা কি অস্তিত্ব সংকটে? এমনই প্রশ্ন উঠছে। ভারতীয় বংশজাত ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী আর পাকিস্তানি বংশজাত সাদিক খান লন্ডনের মেয়র! এমন হিন্দুস্তান-পাকিস্তান জুটি ব্রিটেনের ইতিহাসে তো নয়ই, বিশ্বে আর কোথাও হয়নি। সেটাই করে দেখালেন ব্রিটিশরা। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় দুজনই ক্ষমতার কেন্দ্রে।

ব্রিটিশ রাজনীতিতে কনজারভেটিভ পার্টি (রক্ষণশীল) ও লেবার পার্টি (শ্রমিক পক্ষ)-মূলত এই দুটি দলের মধ্যে ক্ষমতার অদল বদল হয়। বাকিরা ক্রমে ভোটব্যাংকে বড়সড় থাবা মারছে ঠিকই, তবে তাদের পক্ষে এখনও সরকার গড়ার পরিস্থিতি নেই।

সাদিক খানের কথা
কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির ভোট যুদ্ধে ২০১৬ সালে চমক এসেছিল। প্রথমবার কোনও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লন্ডনের মেয়র হন। সাদিক খান এই পদে আসার পর থেকে লন্ডন সব থেকে সংকটপূর্ণ করোনা পরিস্থিতি পার করেছে।  ব্রিটিশ লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাদিক খানের জন্ম ১৯৭০ সালে। জন্ম ঠিকানা সূত্রে তিনি ব্রিটিশ-পাকিস্তানি। তাঁর পারিবারিক বংশ ঠিকুজি বলছে ভারত ভাগের সময় লখনউয়ের বাসিন্দা ছিলেন সাদিকের পরিবার। পরে তাঁরা পাক নাগরিকত্ব নেন। আর ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান ছেড়ে এসেছিলেন সাদিকের পিতা আমানুল্লাহ ও মা শেহরুন খান। তাঁদের সন্তান সাদিক খান পরে ব্রিটেনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সাদিক খানের জন্মের সময় পাকিস্তান ছিল অখন্ড।

ভবিষ্যতের টিউলিপ গার্ডেন!
১৯৭১ সালে পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়। তীব্র রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর তৈরি হয় বাংলাদেশ। এবার ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশজাতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই ধারার এক উত্তরসূরী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। টিউলিপের মা শেখ রেহানা হলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাংসদ টিউলিপ পরবর্তী সময়ে চমক দিতে চলেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ব্রিটেনের রাজনীতিকে এখন বিরাট প্রভাব ফেলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। রাজনৈতিক শতাংশের হিসেব বলছে এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা অন্যান্য যে কোনও দেশের প্রবাসী বাসিন্দাদের তুলনায় বেশি প্রভাবশালী।

ইংল্যান্ড শাসক ঋষিমশাই!
দেড়শ বছরের ভারত শাসন করেছিল ব্রিটিশ তথা ইংরেজরা। সেই ইতিহাসের চাকা ঘুরেই গেল। এবার ইংরেজদের শাসন করবেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ঋষি সুনক।  ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা।

ঋষি সুনক ভারতীয় বংশজাত। তাঁর মা উষা ও পিতা যশবীর দুজনেই ভারতীয়। ১৯৮০ সালে সাউদাম্পটনে জন্ম ঋষির। পরবর্তী সময়ে বিনিযোগ ব্যবসার এক সফল ব্যক্তিত্ব হন। তাঁর স্ত্রী হলেন বিশ্ববিখ্যাত বহুজাতিক ব্যবসায়ী এন আর নারায়ণমূর্তির কন্যা। ফলে শ্বশুরকুলের বিরাট প্রভাবে দ্রুত ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে পাকা আসন করে নেন ঋষি। কনজারভেটিভ দলের সদস্য হন। এবার রাজনৈতিক ডামাডোল ও কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীন টানাপোড়েনে ঋষি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসছেন।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। এও এক কাহিনী। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ করে এই কাহিনীর জন্মদাতা ব্রিটিশরা। তারাই এখন দেখছে তাদেরই মাথার উপর কেটে দেওয়া দুই দেশের বংশোদ্ভূতরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন।