৯ জনকে খুনের পরিণতি ‘টুইটার কিলার’কে মৃত্যুদণ্ড

জাপানের ইতিহাসে এক নৃশংস অধ্যায়ের অবসান। বহুল পরিচিত ‘টুইটার কিলার’ (Twitter Killer) তাকাহিরো শিরাইশিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। ২০১৭ সালে ন’জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করার…

৯ জনকে খুনের পরিণতি ‘টুইটার কিলার’কে মৃত্যুদণ্ড

জাপানের ইতিহাসে এক নৃশংস অধ্যায়ের অবসান। বহুল পরিচিত ‘টুইটার কিলার’ (Twitter Killer) তাকাহিরো শিরাইশিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। ২০১৭ সালে ন’জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করার অপরাধে এই রায় ঘোষণা হয়েছিল। শুক্রবার সেই রায় বাস্তবায়ন করল জাপানের প্রশাসন।

কে এই ‘টুইটার কিলার’ (Twitter Killer)?
তাকাহিরো শিরাইশির অপরাধের ধরন ছিল ভয়ঙ্কর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাকেই খুঁজে নিতেন এই খুনি। বিশেষ করে Twitter প্ল্যাটফর্মে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন তিনি (Twitter Killer)। নিজেকে তাদের ‘সহায়ক’ বলে দাবি করতেন। কখনও বলতেন, ‘আমি তোমাকে মরতে সাহায্য করব’। আবার কখনও বলতেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে আত্মহত্যা করব’।

   

এই কথাগুলিতে বিশ্বাস করে তাঁর ফাঁদে পা দিত হতভাগ্যরা। তারপরে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুযোগ বুঝে নির্মমভাবে খুন করতেন তাকাহিরো (Twitter Killer)। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে রাখতেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টে।

কাদের হত্যা করেছিলেন?
নিহত ৯ জনের মধ্যে একজন পুরুষ বাদে বাকিরা সকলেই কিশোরী বা তরুণী। তাঁদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই জাপান জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

আদালতের রায়:
২০১৭ সালে তাকাহিরো শিরাইশিকে (Twitter Killer) গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দীর্ঘ বিচারপর্বের পর আদালত ২০২০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায়। তবে তাঁর আইনজীবীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাবি করে আসছিলেন, তাঁর শাস্তি যেন কারাবাসে সীমাবদ্ধ থাকে। তাঁদের যুক্তি ছিল, ভুক্তভোগীরা নিজেরাই আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু আদালত এই যুক্তি খারিজ করে দেয়। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘আক্রান্তরা কেউই তাকে খুনের অনুমতি দেননি। এমনকি নীরব সম্মতিও নয়।’’

Advertisements

অবশেষে ফাঁসি কার্যকর:
নিপীড়িতদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতেই অবশেষে শুক্রবার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জাপানের আইনমন্ত্রী কেইসুকে সুজুকি জানিয়েছেন, ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার আগে সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। তবে অপরাধীর অপরিসীম স্বার্থপরতা এবং সমাজে তার অপরাধের প্রভাব বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী রেকর্ড:
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম জাপানে কোনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। গত কয়েক বছরে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কম হলেও, বড় অপরাধে এখনও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে।

এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া ও জাপানের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন এই শাস্তির ফলে, অন্যদিকে অনেকেই আবার মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন।

‘টুইটার কিলার’ (Twitter Killer)-এর এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধকার দিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে সতর্কতা তৈরি করেছে। প্রশাসনের মতে, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও কড়া নজরদারি চালানো হবে।