ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Trump) নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা। এই নীতিকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সিনিয়র সদস্য গ্রেগরি মিক্স স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই “স্বেচ্ছাচারী শুল্কনীতি” দীর্ঘদিনের মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মিক্স বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাই। ইউক্রেনে শান্তির জন্য আমাদের যৌথ আশা রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের এই স্বেচ্ছাচারী শুল্কনীতি এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলছে।” তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন ক্বাত্রার সঙ্গে বৈঠকের পর এই মন্তব্য করেন। ক্বাত্রা মিক্সের “অটল সমর্থন ও পরামর্শের” জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতিতে ভারতকে সরাসরি নিশানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, চীনসহ অন্যান্য রুশ তেল আমদানিকারক দেশকে তেমনভাবে শাস্তি দেওয়া হয়নি। ফলে মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, “ট্রাম্পের এই নীতি আমেরিকানদের ক্ষতি করছে এবং একই সঙ্গে মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে ধ্বংস করছে।”
প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, “আমেরিকার শুল্কের মূল্য শেষ পর্যন্ত আমেরিকার কোম্পানি ও ভোক্তাদেরই দিতে হয়।” ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এই পদক্ষেপকে “ভুল” বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, এতে ভারত চীন ও রাশিয়ার আরও কাছাকাছি চলে যেতে পারে। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টার এবং প্রাক্তন জাতিসংঘ দূত নিকি হ্যালিও সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হলে তা মার্কিন কৌশলগত স্বার্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কূটনীতিক কার্ট ক্যাম্পবেল ভারতকে “একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “সংযম দেখানো জরুরি।”
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতের মতে, সাশ্রয়ী মূল্যের তেল দেশের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে অপরিহার্য। মার্কিন শুল্কনীতির এই চাপ মোকাবিলা করতে ক্বাত্রা সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি দ্বিদলীয় সমর্থন চেয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন শুল্কপ্যাকেজের কারণে শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নয়, জ্বালানি সহযোগিতা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আগামী দিনে এই দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।