মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি উচ্চাভিলাষী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’-এর (golden-dome) পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যা দেশের নিরাপত্তাকে আরও পোক্ত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হবে। এই পরিকল্পনা, যা ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে, মঙ্গলবার ওভাল অফিসে ঘোষণা করা হয়।
এই প্রকল্পের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তিন বছরের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার প্রথম ধাপের জন্য ইতিমধ্যে ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় মহাকাশ-ভিত্তিক অস্ত্র এবং শতাধিক স্যাটেলাইটের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হবে, যা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং এবং ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখবে।
গোল্ডেন ডোম কী? (golden-dome)
‘গোল্ডেন ডোম’ (golden-dome)একটি বহুস্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ব্যালিস্টিক এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ডিফেন্স সিস্টেমটি মূলত ইনফ্রা রে ভিত্তিক যা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে আর ও বেশি সুরক্ষা প্রদান করবে।
ট্রাম্পের জানুয়ারি ২৭-এর নির্বাহী আদেশে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা শুরু হয়, যেখানে তিনি এটিকে “আমেরিকার জন্য আয়রন ডোম” (golden-dome)হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
এই ব্যবস্থায় মহাকাশ-ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর, স্থল ও সমুদ্র-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় থাকবে। প্রকল্পটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই প্রকল্প তাঁর মেয়াদের শেষ নাগাদ, অর্থাৎ দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য
গোল্ডেন ডোমের (golden-dome)মূল উদ্দেশ্য হল চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষ দেশগুলির ক্রমবর্ধমান উন্নত ও মারাত্মক দূরপাল্লার অস্ত্রের হুমকি থেকে আমেরিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, “গোল্ডেন ডোম নিশ্চিত করবে যে আমেরিকার মূল ভূখণ্ড প্রতিপক্ষের উন্নত অস্ত্রের মুখে অরক্ষিত না থাকে।”
এই ব্যবস্থায় শতাধিক স্যাটেলাইটের একটি নেটওয়ার্ক থাকবে, যা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়াও, এই প্রকল্পে মহাকাশে অস্ত্র মোতায়েন করা হবে, যা আমেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
এই প্রকল্পের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় ধরা হয়েছে, যার প্রথম ধাপের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ফেডারেল বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে, এই বিপুল ব্যয় এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই প্রকল্পের ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত জটিলতা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাজনৈতিকভাবে, এই পরিকল্পনা ট্রাম্পের “শান্তির জন্য শক্তি” নীতির অংশ, যা লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিরক্ষা কোম্পানি দ্বারা সমর্থিত। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিপক্ষদের নিরস্ত্র করার জন্য ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
জুলাইতে শুরু হচ্ছে ভারতীয় ফুটবলের নতুন মরসুম!
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চীন এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে, দাবি করে যে এটি “বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতাকে” ক্ষতিগ্রস্ত করবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই পরিকল্পনা (golden-dome)নিয়ে “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। রাশিয়াও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক্স-এ প্রকাশিত পোস্টগুলিতে দেখা গেছে, এই পরিকল্পনাকে অনেকে মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা হিসেবে দেখছেন।
প্রকল্পের নেতৃত্ব ও বাস্তবায়ন
ট্রাম্প জানিয়েছেন, (golden-dome)এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবেন জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন। প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে, যেখানে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই ব্যবস্থা “গেম চেঞ্জার” হবে এবং আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতুলনীয় করে তুলবে। তিনি বলেন, “এটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকাতে সক্ষম হবে।”
বিতর্ক ও সমালোচনা
গোল্ডেন ডোম (golden-dome)পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এর বিপুল ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা। সমালোচকরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি উন্নত হয়নি। এছাড়াও, মহাকাশে অস্ত্র মোতায়েন করা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা এই পরিকল্পনাকে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এক্স-এ পোস্টে অনেকে এই প্রকল্পকে “মহাকাশ যুগের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোল্ডেন ডোম (golden-dome)পরিকল্পনা আমেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এই প্রকল্প দেশের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। তবে, এর বিপুল ব্যয়, প্রযুক্তিগত জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে এই প্রকল্প কীভাবে এগিয়ে যায় এবং বিশ্বব্যাপী কী প্রভাব ফেলে, তা লক্ষণীয় হবে।