Ukraine Ceasefire Talks: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করছেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস বুধবার জানিয়েছে। এই পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এরপর পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এই পরিকল্পনাগুলো বুধবার ইউরোপীয় নেতাদের সাথে একটি ফোন কলে প্রকাশ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস এই প্রতিবেদনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি, তবে বুধবার সকালে ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন যে, তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। এই কথোপকথন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের রাশিয়ায় পুতিনের সাথে “অত্যন্ত ফলপ্রসূ” বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, উইটকফের সাথে পুতিনের বৈঠকে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “সবাই একমত যে এই যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত, এবং আমরা আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে এর জন্য কাজ করব।” ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রথম দিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তিনি জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে পুতিনের সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন এবং জেলেনস্কির সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন। তবে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিনি মস্কোর প্রতি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছেন, কারণ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই সংঘাতের সমাধানে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল এবং তখন থেকে এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ট্রাম্পের এই নতুন উদ্যোগ এই দীর্ঘায়িত সংঘাতের সমাধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই বৈঠকগুলোতে পুতিন এবং জেলেনস্কির সম্মতি এখনো স্পষ্ট নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, এই বৈঠকগুলো শুধুমাত্র ট্রাম্প, পুতিন এবং জেলেনস্কির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং এতে অন্য কোনো ইউরোপীয় প্রতিনিধি অংশ নেবেন না। ইউরোপীয় নেতারা, যারা ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে সমন্বয়কারী ভূমিকা পালন করছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গেছে।
ইউরোপীয় নেতাদের সাথে ট্রাম্পের ফোন কলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির চ্যান্সেলর, ন্যাটোর মহাসচিব, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ উপস্থিত ছিলেন। জেলেনস্কি এই কলের পর একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে, তিনি ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন এবং তার এবং ইউরোপীয় নেতাদের অবস্থান হলো যে যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত, তবে তা একটি “ন্যায়সঙ্গত সমাপ্তি”র মাধ্যমে হতে হবে।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগের পটভূমিতে তিনি সম্প্রতি রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। তিনি ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, কারণ ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প রাশিয়ার তেল রপ্তানির উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যা রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নের একটি প্রধান উৎস। তবে, ভারত এই শুল্ককে “অযৌক্তিক” এবং “অন্যায্য” বলে সমালোচনা করেছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জেলেনস্কি বারবার একটি পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন শান্তির জন্য প্রস্তুত, তবে রাশিয়াকে অবশ্যই তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। তিনি সম্প্রতি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং তাদের অবস্থান সমন্বয় করেছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনায় একটি বড় যুদ্ধবন্দী বিনিময় চুক্তি হয়েছে, যা শান্তি আলোচনার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুতিন ট্রাম্পের সাথে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে তারা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে চান। রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেছেন, পুতিন এবং উইটকফের মধ্যে তিন ঘণ্টার আলোচনায় ইউক্রেন ইস্যুতে কিছু “সংকেত” বিনিময় হয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগ যুদ্ধের সমাধানে একটি নতুন গতি আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে গভীর মতবিরোধ এবং ভূ-রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এই আলোচনার সাফল্য নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে। ট্রাম্পের পূর্বের প্রতিশ্রুতি এবং তার সাম্প্রতিক হতাশা বিবেচনা করলে, এই বৈঠকগুলো হয়তো একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। ইউরোপীয় নেতারা এবং ন্যাটো এই প্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখলেও, তারা ট্রাম্পের নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে বলে মনে হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এই বৈঠকগুলোর ফলাফল বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।