মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (trump) সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের একটি বিশাল অস্ত্র চুক্তি সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা গেছে, এই প্রস্তাবটি মে মাসে ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের সময় ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এই চুক্তি মার্কিন অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের উত্সাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই প্রস্তাবটি এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব (কোয়ালিটেটিভ মিলিটারি এজ বা কিউএমই) বজায় রাখার শর্তে তৈরি করা হয়েছে।
চুক্তির পটভূমি (trump)
এই অস্ত্র চুক্তির প্রস্তাবটি পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করেছিল, যার মাধ্যমে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে এবং চীন থেকে অস্ত্র ক্রয় ও বিনিয়োগ বন্ধ করবে। বিনিময়ে, সৌদি আরবকে আরও উন্নত মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে, এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ট্রাম্প (trump) প্রশাসনের নতুন প্রস্তাবে এই শর্তগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাউস এবং সৌদি সরকারের যোগাযোগ অফিস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্যের জন্য উপলব্ধ ছিল না।
চুক্তির বিবরণ
প্রস্তাবিত অস্ত্র প্যাকেজে লকহিড মার্টিনের এফ-৩৫ জেট, জেনারেল অ্যাটমিক্সের এমকিউ-৯বি সিগার্ডিয়ান ড্রোন, এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্রশস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তিনটি সূত্র জানিয়েছে, এফ-৩৫ জেট নিয়ে আলোচনা হবে, তবে সফরের সময় এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এছাড়া, ২০১৮ সাল থেকে সৌদি আরব জেনারেল অ্যাটমিক্সের ড্রোন সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল, এবং গত ১২ মাসে ২০ বিলিয়ন ডলারের ড্রোন ও অন্যান্য বিমানের চুক্তি নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের বেশ কয়েকজন নির্বাহী এই অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভ্রমণের কথা বিবেচনা করছেন।
ভারতেই ফান্ডিং, নাশকতার ছক ধরে ফেলেও কেন ব্যর্থ ইন্টেলিজেন্স
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এটি প্রথমবার নয় যে ট্রাম্প (trump) সৌদি আরবের সঙ্গে একটি বিশাল অস্ত্র চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৭ সালে, ট্রাম্প (trump) প্রশাসন ১১০ বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তি ঘোষণা করেছিল, যা পরে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ‘অতিরঞ্জিত’ বলে সমালোচনা করেছিল।
ব্রুকিংসের বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল জানিয়েছিলেন, এটি মূলত ‘ইচ্ছার তালিকা’ ছিল, যেখানে বেশিরভাগই চুক্তির পরিবর্তে সম্ভাব্য বিক্রয়ের প্রস্তাব ছিল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত, এই চুক্তির মাধ্যমে মাত্র ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় চূড়ান্ত হয়েছিল। তেলের দাম কমে যাওয়া এবং ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যয়ের কারণে সৌদি আরবের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত হয়েছিল।
ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
এই অস্ত্র চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল, যেমন এফ-১৫ ফাইটার জেট এবং কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম। এই চুক্তি ইরানের প্রভাব মোকাবিলা এবং সৌদি আরবের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত। তবে, ইসরায়েলের কিউএমই বজায় রাখা একটি শর্ত, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিকটতম মিত্র ইসরায়েলকে উন্নততর অস্ত্র সরবরাহ করে। ইসরায়েল নয় বছর ধরে এফ-৩৫ জেট ব্যবহার করছে, যখন সৌদি আরব এখনও এটি পাওয়ার জন্য আলোচনা করছে।
অর্থনৈতিক সুবিধা
ট্রাম্প (trump) এই চুক্তিকে মার্কিন অর্থনীতির জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এটি মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য হাজার হাজার চাকরি সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৭ সালের চুক্তির সময়, ট্রাম্প (trump) দাবি করেছিলেন যে এটি লক্ষাধিক চাকরি সৃষ্টি করবে, যদিও পরবর্তীতে এই দাবি অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণিত হয়।
এই নতুন প্রস্তাবটি লকহিড মার্টিন, জেনারেল অ্যাটমিক্স এবং অন্যান্য মার্কিন কোম্পানির জন্য বড় অর্ডার নিয়ে আসতে পারে। তবে, সমালোচকরা মনে করেন, এই ধরনের চুক্তি ইয়েমেনের মতো সংঘাতে সৌদি আরবের ভূমিকাকে আরও জটিল করতে পারে, যেখানে বেসামরিক মৃত্যুর জন্য সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোট সমালোচিত হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
এই চুক্তি বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, সৌদি আরবের আর্থিক সক্ষমতা তেলের দাম এবং ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যয়ের কারণে সীমিত। দ্বিতীয়ত, মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা অতীতে ইয়েমেনে বেসামরিক হতাহতের কারণে সৌদি আরবের অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করেছে।
২০১৯ সালে, ট্রাম্প কংগ্রেসকে বাইপাস করে ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন, যা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এছাড়া, সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড, বিশেষ করে জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড, এই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণ হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি মার্কিন-সৌদি সম্পর্ককে আরও গভীর করতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং সৌদি আরবের আর্থিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। কংগ্রেসের ভূমিকা, ইসরায়েলের স্বার্থ এবং মানবাধিকার উদ্বেগ এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ট্রাম্পের সৌদি সফর এই প্রস্তাবের বাস্তবতা এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরিষ্কার করবে।