হোয়াইট হাউসে শেহবাজ-ট্রাম্প রুদ্ধদ্বার বৈঠক: নতুন উষ্ণতায় আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ক

ওয়াশিংটন: হোয়াইট হাউসে পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের৷ সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও। এই বৈঠক নিশ্চিতভাবেই…

Trump Shehbaz Sharif Meeting

ওয়াশিংটন: হোয়াইট হাউসে পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের৷ সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও। এই বৈঠক নিশ্চিতভাবেই ঐতিহাসিক৷ কারণ, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ইমরান খানের সফরের পর এই প্রথম কোনও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ওভাল অফিসে প্রবেশ করলেন।

স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার কিছু আগে শেহবাজ শরিফ পৌঁছন হোয়াইট হাউসে। ওয়েস্ট এক্সিকিউটিভ অ্যাভিনিউর প্রবেশপথে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান। পরে ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত হয় মূল বৈঠক, যা ছিল সংবাদমাধ্যমের জন্য বন্ধ। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য, এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ।

   

ট্রাম্পের প্রশংসা: “গ্রেট লিডারস”

বৈঠকের আগে ট্রাম্প প্রকাশ্যে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে আসছেন এক মহান নেতা—পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল, যিনি অসাধারণ মানুষ। দু’জনই দারুণ নেতা।” এই মন্তব্য ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদের সম্পর্কের নতুন উষ্ণতার ইঙ্গিত বহন করে।

সম্পর্কের বদল Trump Shehbaz Sharif Meeting

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। খুব বেশি দিন আগে ট্রাম্প প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে “সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল” বলে অভিযুক্ত করেছিলেন। অথচ এখন শরিফ ও মুনিরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

গত জুনে মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। পরে মুনিরই তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি মীমাংসায় তাঁর ভূমিকা তুলে ধরে। এবার সেই সুরেই ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন শরিফ।

Advertisements

ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে ছায়া

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক সাম্প্রতিক মাসগুলিতে শীতল হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে নয়াদিল্লির বাড়তি রাশিয়ান তেল আমদানির কারণে ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছেন। তাঁর দাবি—এভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে চাপে ফেলা যাবে।

তবুও আশ্বাসের সুরে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনা চলবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “খুব শিগগিরই আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা হবে। আমাদের দুই মহান দেশের জন্য ইতিবাচক ফলই আসবে বলে আমি নিশ্চিত।”

বাণিজ্য চুক্তির নতুন অধ্যায়

অন্যদিকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগোচ্ছে দ্রুততর। জুলাইয়ে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় পাকিস্তানের অপ্রচলিত তেল মজুত উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানি রফতানির উপর শুল্ক কমানো হবে।

সব মিলিয়ে শেহবাজ শরিফের এই সফর ও হোয়াইট হাউস বৈঠক প্রমাণ করছে, দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্কে উষ্ণতা বাড়লেও, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তার ছায়া। এই পালাবদল গোটা অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News