ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ আইনে, নতুন রাজনৈতিক যুদ্ধের সূচনা?

ওয়াশিংটন: জুলাই ৪। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। আর ঠিক এই দিনেই হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করলেন তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের অন্যতম বিতর্কিত ও…

Trump One Big Beautiful Bill

ওয়াশিংটন: জুলাই ৪। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। আর ঠিক এই দিনেই হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করলেন তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের অন্যতম বিতর্কিত ও আলোচিত আইনে ‘One Big Beautiful Bill’। ট্রাম্প বলছেন, “এটা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় করছাঁট, সবচেয়ে বড় ব্যয়ছাঁট, আর সবচেয়ে বড় সীমান্ত নিরাপত্তা বিনিয়োগ।” কিন্তু সমালোচকদের চোখে এটা ‘One Big Brutal Bill’।

বিল পাস হয়েছে কংগ্রেসে সবে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে ২১৮ বনাম ২১৪। কিন্তু ট্রাম্পের কাছে এটা স্পষ্ট বার্ত,: দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্সি এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণে।

   

স্বাক্ষরের মুহূর্তটিও ছিল ‘ট্রাম্প-স্টাইলেই

স্বাক্ষরের মুহূর্তটিও ছিল ‘ট্রাম্প-স্টাইলেই’। চারপাশে যুদ্ধবিমান ও স্টেলথ বোমার উড়ান, পটভূমিতে জাতীয় সংগীত, উপস্থিত কয়েকশো সমর্থক, সেনা পরিবার, হাউজ স্পিকার মাইক জনসন ও সেনেট লিডার জন থিউন। এই রকম এক দৃশ্যপটেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “এই বিলে সবাই উপকৃত: সেনা, সাধারণ মানুষ, চাকরিজীবীরা। আমি এরকম খুশি আমেরিকাকে আগে দেখিনি।”

ট্রাম্পের এই আইনকে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। ঠিক এক দিন আগে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস থেকে মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে এই বিল পাস হয়েছিল। যেখানে মাত্র দুজন রিপাবলিকান বিরোধিতা করলেও সকল ডেমোক্র্যাট বিলটির বিরুদ্ধে ভোট দেন।

কারা কারা উপস্থিত ছিলেন? Trump One Big Beautiful Bill

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাউজ স্পিকার মাইক জনসন, সেনেট মেজরিটি লিডার জন থিউন, সহ ট্রাম্পের সমর্থক ও সেনা পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানটি স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের সঙ্গে মিশে এক বিরল রাজনৈতিক মহার্ঘ অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। যুদ্ধবিমান ও স্টেলথ বোমার উড়ান অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিল বিশেষ।

‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’-এর মূল আকর্ষণ হল ২০১৭ সালের কর ছাড় স্থায়ী করা, সরকারি ব্যয়ে ব্যাপক ছাঁট এবং সীমান্ত নিরাপত্তায় ঐতিহাসিক বিনিয়োগ। বিশেষ করে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের সীমান্ত ও নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে মেক্সিকো সীমান্ত প্রাচীর সম্প্রসারণ, ৪৫ বিলিয়ন ডলারে এক লক্ষ শরণার্থী আটক বেড নির্মাণ এবং ১০ হাজার নতুন ICE অফিসারের নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেক অফিসারকে ১০ হাজার ডলারের সাইনিং বোনাস দেওয়ার বিষয়টিও আলোচিত।

Advertisements

বিতর্কও কম নয়

তবে এই বিলের বিরোধিতা ও বিতর্কও কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলটি দেশের জাতীয় ঋণ আরও ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাড়িয়ে দেবে, যা বর্তমানে ৩৬ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমানোর ফলে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিজের নেতৃত্বে বিরোধীরা এই বিলকে ‘ধনীদের জন্য লাভজনক, সাধারণ মানুষের জন্য বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জেফ্রিজ একদিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে আট ঘণ্টা পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে বিলটির বিরোধিতায় বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা কংগ্রেসের ইতিহাসে দীর্ঘতম বক্তৃতার মধ্যে অন্যতম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প এই বিলকে সামনে রেখে ২০২৬ সালের নির্বাচনে জোরদার প্রচারণার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছেন। যদিও বিলটি তার প্রশাসনের জন্য বড় সাফল্য, তবু এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলবে দীর্ঘদিন।

অতীতের করছাঁট বজায় রাখা এবং সীমান্ত নিরাপত্তায় বড় বিনিয়োগ করাকে ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকরা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলছেন। তবে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় কমানো ও ঋণের অতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে উদ্বেগও বিরাজ করছে।

স্বাধীনতা দিবসের এমন ঐতিহাসিক দিনে এই আইন পাস ও স্বাক্ষর হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে যে, তারা দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে বড় পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে। কিন্তু বিলটি সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেটা সময়ই বলবে।