মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের শিরোনামে। ২৬ আগস্ট হোয়াইট হাউসে তিনি আয়োজন করলেন দীর্ঘতম প্রকাশ্য মন্ত্রিসভা বৈঠক (Public Cabinet Meeting), যা চলল তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। মার্কিন প্রশাসনের ইতিহাসে প্রকাশ্যে এত দীর্ঘ বৈঠকের নজির খুব কমই রয়েছে। বৈঠকের বিশেষত্ব শুধু এর দীর্ঘ সময় নয়, বরং পুরো বৈঠক জুড়ে প্রেসিডেন্টের রসিকতা, হাসি-মশকরা এবং স্বভাবসুলভ খোলামেলা বক্তব্যই মূল আকর্ষণ ছিল।
লেবার ডে সামনে রেখে এই বৈঠকে প্রশাসনের সাফল্য ও নীতি বাস্তবায়নের বিষয় তুলে ধরতে মন্ত্রিসভার প্রতিটি সদস্যকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন ট্রাম্প। বৈঠকের শুরুতেই তিনি বলেন, “আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্যের যুগে আছি। সবাই নিজের নিজের কাজের কথা জনগণকে জানাক।” এরপর প্রতিটি মন্ত্রী নিজেদের দপ্তরের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট মাঝেমধ্যেই হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করে বৈঠকের পরিবেশকে হালকা রাখেন।
হোয়াইট হাউসের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বৈঠক মূলত জনসমক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রম তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই আয়োজিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরে ট্রাম্প আবারও ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর প্রশাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা বৈঠক এটি। এতে অংশগ্রহণ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষা সচিব, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রায় সব শীর্ষ পদাধিকারী। বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সীমান্ত নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি এবং প্রশাসনিক সংস্কার।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকে বিভিন্ন সেক্টরে তাঁর সরকারের সাফল্যের দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকার কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস গড়ছি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমেরিকার অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা এবং সীমানা রক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে।” প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক নীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রশাসনের আরও দ্রুত সংস্কারের সংকেত দেন।
বৈঠকের পুরো সময়টাই সরাসরি সম্প্রচার করা হয় হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্মে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্প প্রকাশ্যে এত দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাবিনেট বৈঠক করে আবারও তাঁর স্বভাবসুলভ রাজনৈতিক শৈলী প্রদর্শন করলেন। বৈঠকে হাস্যরস এবং হালকা-ফুলকা মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই বৈঠক মূলত ২০২৬ সালের মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচন এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিকল্পনার প্রস্তুতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। বৈঠকের ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে জনসমর্থন ধরে রাখতে চাইছে এবং তাদের অর্জনগুলিকে সরাসরি জনতার সামনে তুলে ধরার জন্যই এই কৌশল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই বৈঠককে ট্রাম্পের “সবচেয়ে দীর্ঘ প্রকাশ্য মন্ত্রিসভা বৈঠক” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এভাবে প্রকাশ্যে প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরা আগামী দিনের প্রচারণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।