আমেরিকায় টিকটক (TikTok Deal) বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরেই তুমুল আলোচনার মধ্যে অবশেষে নতুন ইঙ্গিত দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের সময়সীমার ঠিক আগে তিনি জানালেন, একটি “নিশ্চিত” চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে আমেরিকায় জনপ্রিয় এই অ্যাপ চালু থাকার পথ খুলে যেতে পারে।
ট্রাম্প সোমবার ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে একটি কোম্পানিকে বাঁচাতে চাইছিল, সেই কোম্পানিকে নিয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।” যদিও তিনি টিকটকের নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি, রাজনৈতিক মহল এবং বিশেষজ্ঞদের মতে তাঁর এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে টিকটককে ঘিরেই।
স্পেনের মাদ্রিদে সম্প্রতি শেষ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য বৈঠক। এই বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা ছিল টিকটকের ভবিষ্যৎ। মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে চাইছে, টিকটকের মূল সংস্থা বাইটড্যান্স (ByteDance) যাতে তাদের মালিকানার বড় অংশ মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে, চিন এই প্রস্তাবে সায় দিতে নারাজ।
আমেরিকার তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, যদি বাইটড্যান্স তাদের অংশীদারিত্বে ছাড় না দেয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করা হবে। তবে একই সঙ্গে এই বৈঠকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যুও আলোচনায় উঠে আসে—যেমন শুল্কনীতি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং চীনের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান সোমবার বলেন, “টিকটক নিয়ে চিনের অবস্থান আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। এই বিষয়ে নতুন কিছু বলার নেই।” তবে বৈঠক শেষ হওয়ার পর বেইজিংয়ে দেখা যাচ্ছে, চিন আমেরিকার চাপের জবাব দিচ্ছে ভিন্ন পথে। সোমবারই চিনের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা করেছে, মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়ার (Nvidia) বিরুদ্ধে অ্যান্টি-মনোপলি আইন ভাঙার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকটক নিয়ে আমেরিকার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। ব্রাসেলস-ভিত্তিক চিন্তাশীল সংস্থা ব্রুগেলের (Bruegel) সিনিয়র ফেলো অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো বলেন, “চিনের পক্ষে টিকটক বিক্রি করা মানে পশ্চিমা দেশগুলোতে তাদের অন্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জোরপূর্বক বিক্রির দৃষ্টান্ত তৈরি করা। একই সঙ্গে, আমেরিকার জন্যও টিকটক নিষিদ্ধ করা কঠিন, কারণ দেশের তরুণ ভোটারদের মধ্যে এই অ্যাপ ভীষণ জনপ্রিয়।”
ট্রাম্প নিজেও তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন, দেশের তরুণরা যে একটি কোম্পানিকে বাঁচাতে চাইছিল, সেটি রক্ষা পেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে ট্রাম্প তরুণ ভোটারদের খুশি রাখার কৌশল নিয়েছেন।