আজই ট্যারিফ চিঠি পাঠাবেন ট্রাম্প, ব্রিকস মিত্রদের অতিরিক্ত ১০% শুল্কের হুঁশিয়ারি

ওয়াশিংটন ডিসি: বিশ্ব অর্থনীতির চালচিত্রে নতুন উত্তেজনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি আজ (সোমবার, ৭ জুলাই) থেকে বিশ্বের একাধিক দেশের কাছে প্রথম দফার ‘ট্যারিফ…

trump global trade tariffs brics

ওয়াশিংটন ডিসি: বিশ্ব অর্থনীতির চালচিত্রে নতুন উত্তেজনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি আজ (সোমবার, ৭ জুলাই) থেকে বিশ্বের একাধিক দেশের কাছে প্রথম দফার ‘ট্যারিফ চিঠি’ পাঠাতে চলেছেন, যার মাধ্যমে কার্যকর হবে নতুন রিসিপ্রোকাল শুল্ক ব্যবস্থা। এই শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকে চালু হবে।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আমেরিকা একাধিক দেশের সঙ্গে উচ্চস্তরের বাণিজ্য আলোচনায় লিপ্ত- যার মধ্যে ভারত অন্যতম।

   

ট্রাম্পের ট্যারিফ পলিসি

এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শুল্ক (reciprocal tariff) আরোপের কথা ঘোষণা করেছিল, যা মূলত ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এই আলোচনা ও সম্ভাব্য চুক্তির জন্য সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট করা হয়েছে।

ট্রাম্প তাঁর Truth Social অ্যাকাউন্টে লেখেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, সোমবার দুপুর ১২টা (ইস্টার্ন টাইম) থেকে আমেরিকার নতুন ট্যারিফ চিঠি ও চুক্তি বিভিন্ন দেশের কাছে পাঠানো শুরু হবে।”

তিনি জানান, ১২ থেকে ১৫টি দেশ এই চিঠির আওতায় পড়বে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে, বাকিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সোমবার থেকে বুধবার ধাপে ধাপে এই চিঠিগুলি পাঠানো হবে।

ব্রিকস ঘনিষ্ঠ দেশগুলির প্রতি কঠোর বার্তা trump global trade tariffs brics

ট্রাম্প আরও এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, “যে কোনও দেশ যারা আমেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্রিকসের নীতিকে সমর্থন করছে, তাদের উপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে।”

এই ঘোষণার ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন ব্রিকস জোটকে মার্কিন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। বর্তমানে ব্রিকস জোটে রয়েছে-ভারত, চিন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও কয়েকটি দেশও সম্প্রতি জোটে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শুধুই অর্থনৈতিক নয়, এর পেছনে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক বার্তা। এটি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিরই সম্প্রসারণ।

Advertisements

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক কি আরও চাপে?

যদিও ট্রাম্প কোনও দেশের নাম সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি, তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ এই অতিরিক্ত শুল্কের শিকার হতে পারে।

বর্তমানে ভারত ও আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্ক বিভিন্ন ইস্যুতে টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কৃষিপণ্য, প্রযুক্তি হস্তান্তর, ও প্রতিরক্ষা বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে দোদুল্যমানতা স্পষ্ট।

এই নতুন শুল্ক-নীতি ভারতের উপর একটি অতিরিক্ত কূটনৈতিক চাপ হিসেবেও কাজ করতে পারে।

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনী কৌশল

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা কেবল বৈদেশিক বাণিজ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী রাজনীতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি তাঁর জাতীয়তাবাদী বাণিজ্য নীতিকে আরও জোরদার করতে চাইছেন, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষণে ধরা পড়ছে ট্রাম্প এই বার্তার মাধ্যমে নিজের সমর্থকদের দেখাতে চাইছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, কৃষক ও চাকরিপ্রার্থীদের স্বার্থেই বিদেশি দেশগুলির উপর চাপ তৈরি করছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু একটি নতুন শুল্ক কাঠামোর সূচনা নয়, এটি ভবিষ্যতের বহু-মেরু বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে ব্রিকস জোটের উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বার্তা দিতে চাইছে যে, তার প্রভাববলয়ের বাইরে বেরোলে মূল্য চোকাতে হবে।

গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ করে যারা বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার খোঁজে ব্রিকসের দিকে ঝুঁকছে।