ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Trump) আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তিনি অবিলম্বে দুই দেশের সম্পর্ক মেরামতের পদক্ষেপ নেন। তাঁদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে, অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বিপদের মুখে ফেলছে।
কংগ্রেস সদস্যরা হোয়াইট হাউসে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, “আমরা এমন অঞ্চলগুলির প্রতিনিধিত্ব করি যেখানে শক্তিশালী ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায় রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ভারতের গভীর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আপনার প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো এই সম্পর্ককে দুর্বল করেছে এবং উভয় দেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা আপনাকে অবিলম্বে সম্পর্ক পুনর্গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে ভারতের পণ্যের উপর শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর ফলে মার্কিন ভোক্তাদের উপর পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশীয় শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খলা বা সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বেড়েছে এবং শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান বিঘ্নিত হয়েছে।”
আইনপ্রণেতারা জানান, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্ক উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দুই দেশের লক্ষাধিক চাকরি সৃষ্টিতে সহায়তা করে এবং শিল্পক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। ভারতীয় কোম্পানিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেছে। একইসঙ্গে আমেরিকান কোম্পানিগুলিও ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল ভোক্তা বাজারে প্রবেশ করেছে।
তাঁদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, কৌশলগত সম্পর্কের দিক থেকেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে ভারত রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করছে। আইনপ্রণেতারা বলেন, “এই প্রবণতা উদ্বেগজনক, কারণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াডের সদস্য হিসেবে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে) ভারত আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও নৌপথ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।”
চিঠিতে ট্রাম্পকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তিনি শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনা করেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করেন এবং দুই দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্বকে পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের অংশীদারিত্ব বিশ্বের কাছে বার্তা দেয় যে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতে পারে।”
তাঁরা আরও বলেন, ভবিষ্যতের জন্য পথ হওয়া উচিত সহযোগিতা ও সমন্বয়ের, সংঘাত নয়। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকা অপরিহার্য এবং এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের একটি প্রধান স্তম্ভ।