মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (trump) বিভাজনকারী নীতির বিরুদ্ধে শনিবার আমেরিকার প্রধান শহরগুলিতে লক্ষাধিক বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই, বাণিজ্য শুল্ক এবং নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাসের মতো নীতির বিরোধিতায় ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, হিউস্টন, ফ্লোরিডা, কলোরাডো এবং লস অ্যাঞ্জেলেস সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হাঁটতে হাঁটতে ৪৩ বছর বয়সী চিত্রশিল্পী শাইনা কেসনার বলেন, “আমি খুব রেগে আছি, সব সময় ক্ষুব্ধ থাকি। একদল সুবিধাভোগী, সাদা চামড়ার কথিত ধর্ষকরা আমাদের দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা মোটেও ভালো নয়।” তাঁর এই কথা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটায়, যারা ট্রাম্পের নীতিকে আমেরিকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে
ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন, যাদের মধ্যে অনেকে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন। এখানে বক্তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে বাস ও ভ্যানে করে আসা ৬৪ বছর বয়সী বাইক ট্যুর গাইড ডায়ান কোলিফ্রাথ বলেন, “আমাদের প্রায় ১০০ জন এই অসহনীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছি। এই সরকার আমাদের বিশ্বজুড়ে মিত্রদের হারাচ্ছে এবং দেশের মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। তারা আমাদের সরকারকে ধ্বংস করছে।”
লস অ্যাঞ্জেলেসে
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন মহিলা ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস “দ্য হ্যান্ডমেইডস টেল”-এর চরিত্রের পোশাক পরে একটি বড় পতাকা নাড়ছিলেন, যার উপর লেখা ছিল, “আমার গর্ভ থেকে বেরিয়ে যাও।” এটি ট্রাম্পের গর্ভপাত-বিরোধী নীতির প্রতি সরাসরি ইঙ্গিত। অন্যদিকে, কলোরাডোর ডেনভারে একজন বিক্ষোভকারী একটি প্ল্যাকার্ড ধরেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, “আমেরিকার জন্য কোনও রাজা নয়,” যা ট্রাম্পের শাসনকে একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে।
ইউরোপের কয়েকটি রাজধানীতেও এর প্রভাব
এই বিক্ষোভ শুধু আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ইউরোপের কয়েকটি রাজধানীতেও এর প্রভাব দেখা গেছে। লন্ডনে একটি সমাবেশে মার্কিন-ব্রিটিশ দ্বৈত নাগরিক লিজ চেম্বারলিন এএফপি-কে বলেন, “আমেরিকায় যা ঘটছে তা সবার সমস্যা। এটি অর্থনৈতিক পাগলামি। ট্রাম্প আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।” বার্লিনে ৭০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সুজান ফেস্ট ট্রাম্পের নীতিকে “সাংবিধানিক সংকট” হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “এই লোকটি একজন পাগল।”
আমেরিকায় বামপন্থী গোষ্ঠী যেমন মুভঅন এবং উইমেন্স মার্চের একটি জোট “হ্যান্ডস অফ” নামে ১,০০০টিরও বেশি শহরে এবং প্রতিটি কংগ্রেসনাল জেলায় এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা ট্রাম্পের নীতিকে গণতন্ত্রের উপর হামলা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারি চাকরি হ্রাস, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি এবং নাগরিক অধিকারের ক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
INS সুনয়নাকে ফ্ল্যাগ অফ করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ৯টি দেশে করবে সফর
ট্রাম্পের (trump) প্রশাসন সম্প্রতি বেশ কিছু আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে
ট্রাম্পের (trump) প্রশাসন সম্প্রতি বেশ কিছু আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফেডারেল কর্মীদের ব্যাপক ছাঁটাই, সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য তহবিল কাটছাঁট এবং অভিবাসীদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া, তাঁর বাণিজ্য নীতি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই নীতিগুলি আমেরিকার মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির জন্য ক্ষতিকর এবং ধনীদের পক্ষে কাজ করছে।
ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল মলের সমাবেশে বক্তারা ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে বলেন, “এই প্রশাসন আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। আমরা নীরব থাকব না।” ডায়ান কোলিফ্রাথের মতো বিক্ষোভকারীরা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের নীতি আমেরিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষতি করছে এবং দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
ইউরোপে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের (trump) বাণিজ্য শুল্কের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। লন্ডনের লিজ চেম্বারলিন বলেন, “ট্রাম্পের নীতি শুধু আমেরিকার জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি।” বার্লিনের সুজান ফেস্ট মনে করেন, ট্রাম্পের শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর আঘাত হানছে।
এই বিক্ষোভগুলি “হ্যান্ডস অফ” আন্দোলনের অংশ, যা আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে চান যে, জনগণ তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার উপর হামলা মেনে নেবে না। লস অ্যাঞ্জেলেসে গর্ভপাত-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, “আমাদের শরীর, আমাদের অধিকার।”
ট্রাম্পের (trump) সমর্থকরা যদিও বলছেন, তিনি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তারা মনে করেন, ট্রাম্পের নীতি দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। এই ঘটনা আগামী দিনে আমেরিকার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে বলে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে। তবে তিনি তাঁর নীতিতে অটল থাকার কথা বলেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।