মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের উপর আরোপিত শুল্ক নিয়ে এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) যাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে ট্রাম্পের প্রশাসনের অধিকাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বেআইনি। তবে আপিল আদালত সাময়িকভাবে শুল্ক কার্যকর রেখেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সময় দিয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে যুক্তি দিয়েছে, এই শুল্কই ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ”।
ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে দাখিল করা নথিতে লিখেছে, “প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA) অনুযায়ী ভারতের উপর শুল্ক আরোপের অনুমোদন দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত বিদ্যমান জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
গত ২৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে। বর্তমানে শুল্কের হার ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর অর্ধেক ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি কেনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এবং বাকি অর্ধেক ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ফাইলিংয়ে দাবি করা হয়েছে, “শুল্ক থাকলে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘ধনী দেশ’, আর শুল্ক না থাকলে দেশটি ‘দরিদ্র’ হয়ে পড়বে। এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র মৃতপ্রায় অর্থনীতির মুখে দাঁড়িয়েছিল, আর এখন বিদেশি দেশগুলির থেকে ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহের কারণে দেশটি আবার শক্তিশালী, আর্থিকভাবে স্থিতিশীল এবং সম্মানিত।”
তবে মার্কিন ফেডারেল আপিল আদালতের ৭-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায়ে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জরুরি পরিস্থিতিতে কিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু তার ক্ষমতার মধ্যে শুল্ক আরোপ বা শুল্কহার নির্ধারণের ক্ষমতা নেই। আদালতের এই রায়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তার ছায়া নেমেছে।
এদিকে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রায়ের সমালোচনা করে Truth Social-এ লিখেছেন, “আপিল আদালত ভুল রায় দিয়েছে, তারা জানে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত জিতবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের সাহায্যে লড়াই চালিয়ে যাব।”
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট মন্তব্য করেছেন, শুল্ক কার্যকারিতা স্থগিত করলে “মার্কিন কূটনৈতিক অবস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” এর ফলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও চাপে পড়তে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করছে যে ২০২৫ সালের মার্কিন নির্বাচনের বছরেও বাণিজ্যনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের উপরও এই শুল্ক সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ভারতের জন্য এটি অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।