Trade War Escalates: Trump Imposes 125% Tariff on China
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (trump) বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম রয়ে গেছে: চিন। অন্যান্য দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন ১০% শুল্কের বাইরে ৯০ দিনের অবকাশ পেয়েছে, কিন্তু চিনের উপর শুল্ক আরও কঠোর করা হয়েছে। ৯ এপ্রিল, ২০২৫-এ ট্রাম্প চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫%-এ উন্নীত করেন, যা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ট্রাম্পের (trump) মতে
ট্রাম্পের মতে, এই পদক্ষেপের কারণ বেইজিংয়ের “বৈশ্বিক বাজারের প্রতি সম্মানের অভাব”। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিনের পক্ষ থেকে মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে সরাসরি এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পকে এই পদক্ষেপে প্ররোচিত করেছে।
যেখানে অনেক দেশ ট্রাম্পের (trump) প্রতিশোধমূলক শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিয়ে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে, চিন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। ১১ এপ্রিল, চিন ট্রাম্পের পদক্ষেপকে “হাস্যকর” আখ্যা দিয়ে মার্কিন পণ্যের উপর নিজস্ব শুল্ক ১২৫%-এ বাড়িয়েছে। ফলে, বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
কীভাবে মেহুল চোকসির সুইজারল্যান্ড পালানোর পরিকল্পনা ভেস্তে দিল ভারত
চিনের শক্ত অবস্থান
মার্কিন-চিন সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের (trump) প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১) চিনা-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সময় বেইজিং যেখানে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথ খুঁজছিল, এবার তাদের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী। চিন এখন বিশ্বাস করে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান বা তার চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম, এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে।
চিনের এই আত্মবিশ্বাসের পিছনে রয়েছে গত কয়েক বছরে তাদের অর্থনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন। চিন তার বাণিজ্য নেটওয়ার্ককে বৈচিত্র্যময় করেছে এবং মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরতা কমিয়েছে। প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা এবং উদ্ভাবনের উপর জোর দিয়ে চিন তার অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো উদ্যোগ চিনকে বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি প্রভাবশালী অবস্থান দিয়েছে।
শুল্কের প্রভাব
এই উচ্চ শুল্কের প্রভাব চিনের রপ্তানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের আসবাবপত্র, পোশাক, খেলনা এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর উপর গভীরভাবে পড়বে। এই শিল্পগুলো মার্কিন ভোক্তাদের জন্য বড় পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করে। তবে, চিনের অর্থনীতির গঠন এখন এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে তারা এই ধাক্কা সামাল দিতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করে। চিনের অভ্যন্তরীণ বাজারও যথেষ্ট বড় হয়েছে, এবং তারা এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের অন্যান্য বাজারে তাদের রপ্তানি বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক এবং শিল্পপতিরা চিনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। বিশেষ করে, মার্কিন সয়াবিন, গম, ভুট্টা এবং মাংস রপ্তানিকারকরা চিনের বাজারে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। চিন ইতিমধ্যে ব্রাজিল এবং অন্যান্য দেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়িয়েছে, যা মার্কিন কৃষকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
চিনের এই শক্ত অবস্থান বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন গতিশীলতা তৈরি করছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে চিনের প্রতিক্রিয়া অন্যান্য দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, “শুল্ক যুদ্ধে কোনো বিজয়ী নেই।” তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন “একতরফা বুলিং” প্রতিরোধের কথা বলেছেন। এই বক্তব্য চিনের কৌশলগত পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে তারা বৈশ্বিক জোট গঠনের মাধ্যমে মার্কিন চাপ মোকাবিলা করতে চায়।
ইউরোপীয় দেশগুলো এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে, তবে তারাও শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। তবে, চিনের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে তারা এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন উভয়ের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। মার্কিন ভোক্তাদের জন্য চিনা পণ্যের দাম বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, চিনের অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, তাদের বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য নেটওয়ার্ক এবং বৈশ্বিক প্রভাব তাদের এই সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
ট্রাম্পের প্রশাসন দাবি করছে যে এই শুল্ক মার্কিন শিল্পকে রক্ষা করবে এবং চাকরি সৃষ্টি করবে। তবে, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে এই নীতি মন্দার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গত সপ্তাহে বৈশ্বিক শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে, যা এই শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধ এখন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে চিন কোনো পিছু হটার লক্ষণ দেখাচ্ছে না। ট্রাম্পের ১২৫% শুল্ক এবং চিনের সমান প্রতিক্রিয়া বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। চিনের শক্তিশালী অবস্থান এবং বৈশ্বিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা এই যুদ্ধে তাদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে। তবে, এই দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে, তা এখনও অজানা। বৈশ্বিক বাজার এবং ভোক্তারা এই যুদ্ধের পরিণতি সামলাতে প্রস্তুত কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।