‘যুদ্ধ থেমে গিয়েছে,’ গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক সফরে ট্রাম্প

ওয়াশিংটন: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত অধ্যায়ের অবসান— এই বার্তাই নিয়ে সোমবার ইসরায়েল ও মিশরের পথে রওনা হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাত্রাপথেই এক ঐতিহাসিক ঘোষণা, “যুদ্ধ শেষ।…

Trump Announces End of Israel-Hamas War

ওয়াশিংটন: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত অধ্যায়ের অবসান— এই বার্তাই নিয়ে সোমবার ইসরায়েল ও মিশরের পথে রওনা হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাত্রাপথেই এক ঐতিহাসিক ঘোষণা, “যুদ্ধ শেষ। ঠিক আছে? সবাই বুঝেছেন তো?” সাংবাদিকদের উদ্দেশে এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর আকাশেই জানালেন ট্রাম্প, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে।

Advertisements

“ট্রাম্প পিস মিশন”

হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, ট্রাম্পের এই সফর কেবল যুদ্ধবিরতি উদ্‌যাপনের জন্য নয়, বরং সেই শান্তিচুক্তিকে স্থায়ী রূপ দেওয়া এবং গাজার পুনর্গঠন কার্যক্রমের সূচনা করা তাঁর প্রধান লক্ষ্য। একে বলা হচ্ছে “ট্রাম্প পিস মিশন”, মার্কিন কূটনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ অথচ তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ।

Advertisements

প্রেসিডেন্টের দাবি, এই যুদ্ধবিরতি এবার টিকবে।ট্রাম্প বলেন,  “আমার মনে হয় এটা স্থায়ী হবে। মানুষ ক্লান্ত— শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই সংঘাত চলছে। এখন সবাই শান্তি চায়।’’

গাজার পুনর্গঠন নিয়ে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, মানবিক সহায়তাই সর্বাগ্রে। তাঁর কথায়, “প্রথমে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, তারপরই শুরু হবে পুনর্গঠন। এবং সেটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। কয়েক বছরের মধ্যেই গাজা আবার প্রাণ ফিরে পাবে— এমন সুযোগ বহু শতাব্দীতে একবারই আসে।”

ইসরায়েল ও মিশরের উদ্দেশে রওনা Trump Announces End of Israel-Hamas War

রবিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প রওনা দেন ইসরায়েল ও মিশরের উদ্দেশে। সফরের প্রথম পর্বে তিনি ইসরায়েলি সংসদ ‘কনেসেট’-এ ভাষণ দেবেন— যা শেষবার হয়েছিল ২০০৮ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়ে। এরপর মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত হবে এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন, যেখানে ট্রাম্প, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা গাজা ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবেন।

চলতি চুক্তির প্রথম ধাপেই রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, হামাসের হাতে থাকা শেষ ৪৮ জন বন্দির মুক্তি, ইসরায়েলি কারাগারে থাকা কয়েকশো প্যালেস্টিনীয় বন্দির মুক্তি, গাজায় মানবিক সাহায্যের প্রবাহ বৃদ্ধি, এবং ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার। শুক্রবার গাজার কয়েকটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরই শুরু হয়েছে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা, যার মধ্যে হামাসকে বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের স্থায়ী অবসান

‘ট্রাম্প এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত এই শান্তি-চুক্তির লক্ষ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার পর শুরু হওয়া দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের স্থায়ী অবসান ঘটানো।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াশিংটনের এই প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে বৃহত্তর আঞ্চলিক কূটনীতি— একাধিক আরব ও মুসলিম রাষ্ট্র এখন নতুন উদ্যমে ইসরায়েল-প্যালেস্টিনীয় সমস্যা সমাধানে সক্রিয় হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও আরও দৃঢ় হচ্ছে।

যুদ্ধের ক্ষত গভীর

তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। যুদ্ধের ক্ষত এখনও গভীর, আন্তর্জাতিক মহলে বিচ্ছিন্ন ইসরায়েল এখন গণহত্যার অভিযোগে চাপে। দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগে রাষ্ট্রসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে চলছে এই অভিযোগের শুনানি, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও বহাল রয়েছে।

সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই সফর কেবল কূটনৈতিক নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। শান্তির দীর্ঘ অনিশ্চিত পথে এই সফর কতটা দিশা দেখাবে, সেটাই এখন বিশ্বের অপেক্ষা।