ওয়াশিংটন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সাংবাদিকদের উপর নতুনভাবে নজরদারি ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পেন্টাগনে কর্মরত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য শুক্রবার রাতে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে—এখন থেকে অনুমোদিত তথ্য ছাড়া অন্য কিছু সংগ্রহ বা প্রচার করলে সাংবাদিকদের প্রেস ক্রেডেনশিয়াল বাতিল করা হবে।
এই নীতিতে বলা হয়েছে, কোনও তথ্য যদি অপ্রকাশিত বা অঅনুমোদিত হয়—even যদি তা গোপন না হয়—তাও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানাচ্ছে, পেন্টাগন এমনকি সাংবাদিকদের স্বাভাবিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কড়া নিয়ন্ত্রণ বসাচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি, পেন্টাগন এক “রোটেশনাল প্রোগ্রাম” চালু করে, যাতে মূলধারার বা সমালোচনামূলক সংবাদমাধ্যমকে সরিয়ে জায়গা দেওয়া হয় প্রো-ট্রাম্প বা ডানপন্থী নতুন সংবাদমাধ্যমকে। সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রোগ্রামের ফলে দীর্ঘদিনের সংবাদমাধ্যম যেমন নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন-এর অফিস স্পেস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও প্রশাসনের দাবি, অফিস স্পেস কমলেও প্রেস ব্রিফিং বা সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ, ‘করেসপন্ডেন্টস’ করিডর’ নামে পরিচিত পেন্টাগনের ওই অফিস স্পেস মার্কিন গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। দশকের পর দশক ধরে সংবাদমাধ্যম সেখানে কাজ করে এসেছে।
সমালোচকরা মনে করছেন, প্রশাসনের এই নতুন বিধিনিষেধ রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এটি আসলে “কঠোর সাংবাদিকতাকে শাস্তি দেওয়া” এবং প্রো-ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মার্কিন কংগ্রেস, হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগন সব জায়গাতেই সাংবাদিকদের জন্য অফিস স্পেস দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ট্রাম্প প্রশাসন খোলাখুলিভাবে বলছে, তারা “অন্যধারার সংবাদমাধ্যম” বা অপ্রচলিত সংবাদমাধ্যমকে জায়গা দিতে চায়—যাদের মধ্যে অনেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল।
এরই মধ্যে একাধিক সংবাদ সংস্থা পেন্টাগনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদের মতে, অফিস স্পেস হারানো মানে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৌশলগত অসুবিধা তৈরি হওয়া। পেন্টাগন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিদিনের যোগাযোগ, দ্রুত তথ্য পাওয়া এবং জরুরি পরিস্থিতিতে রিপোর্ট করা—সবই বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সাংবাদিক মহলের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। আন্তর্জাতিক মহলেও এই পদক্ষেপকে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
