ওয়াশিংটন, ২ ডিসেম্বর: আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Trump 36-country travel ban) দ্বিতীয় মেয়াদে ইমিগ্রেশন নীতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে এক ‘ব্যাপক ট্রাভেল ব্যান’-এর মাধ্যমে। গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “যদি তোমরা আমেরিকার মূল্যবোধের সঙ্গে না মিলে যাও, আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আইন এবং আমাদের মানুষকে সম্মান না করো, তাহলে তোমরা এখানে স্বাগত জানানোর যোগ্য নও!”
এই কট্টর বক্তব্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৯টি দেশের নাগরিকদের প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, যা জুন ২০২৫-এ শুরু হয়েছিল এবং এখন আরও বিস্তারের পরিকল্পনায় রয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোএমের সুপারিশে এই ব্যান আরও ৩৬টি দেশে প্রসারিত হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।এই ঘোষণার পটভূমি গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা।
হাইকোর্ট নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েই বড় পদক্ষেপ তৃণমূলের
পুলিশ অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, আক্রমণকারী একজন আফগান নাগরিক, যিনি পর্যটন ভিসায় এসে অতিরিক্ত সময় থেকে ছিলেন। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, “এই ধরনের ‘বিদেশি আক্রমণকারী’দের প্রবেশ বন্ধ না করলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন।” ফলে, জুন মাসে চালু হয়েছিল ১২টি দেশের (যেমন আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন, ভেনেজুয়েলা, হাইতি) উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এবং আরও সাতটি দেশে (যেমন সুদান, পাকিস্তান, লিবেরিয়া) সীমিত প্রবেশের ব্যবস্থা।
এখন এই তালিকায় যোগ হচ্ছে আরও সাতটি দেশ, যার মধ্যে আছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া এবং কেন্দ্রীয় এশিয়ার কয়েকটি দেশ। নোএম বলেছেন, “এই দেশগুলোর ভিসা ওভারস্টে রেট উচ্চ, তথ্য শেয়ারিংয়ে ঘাটতি এবং ডিপোর্টেশন গ্রহণে অনিচ্ছুক।” এই ব্যানের প্রভাব বিশাল। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে এই দেশগুলো থেকে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ আমেরিকায় এসেছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন দক্ষ পেশাদার, ছাত্র এবং শরণার্থী।
এখন তাঁদের ইমিগ্রান্ট এবং নন-ইমিগ্রান্ট উভয় ভিসা (যেমন H-1B, F-1, B-1/B-2) বাতিল হয়ে যাবে। যাঁরা জুন ৯ তারিখের আগে মার্কিন ভূখণ্ডে ছিলেন, তাঁরা নিরাপদ, কিন্তু নতুন প্রবেশকারীদের জন্য এয়ারপোর্টে অ্যারাইভালের সময় চেকিংয়ে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) ইতিমধ্যে ১৯টি দেশের গ্রিন কার্ড ধারীদের রিভিউ শুরু করেছে, যাতে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ চিহ্নিত করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ফন ডের লেইয়েন বলেছেন, “এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রতি অবিশ্বাসের পরিচায়ক।” বাংলাদেশ সরকার মার্কিন দূতাবাসে প্রতিবাদ জানিয়েছে, কারণ হাজার হাজার বাংলাদেশি ছাত্র এবং পেশাদার এখন অস্থির। ভারতও সতর্কতা জারি করেছে, যাতে এই ব্যান দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে প্রভাবিত না করে।
