ভারতের সাইবার নিরাপত্তা বলয়ে অ্যালার্ম গোয়েন্দা সংস্থাগুলির। পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ হ্যাকার গোষ্ঠী ‘ট্রান্সপারেন্ট ট্রাইব’, যারা বহু বছর ধরে ভারতের সরকারি নেটওয়ার্কে হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে, এখন এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে তাদের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযান।
তাদের অস্ত্র, উন্নতমানের স্পাইওয়্যার ‘ডেস্কর্যাট’, যা নিঃশব্দে প্রবেশ করে সরকারি ও সামরিক নেটওয়ার্ক থেকে গোপন তথ্য চুরি করতে সক্ষম।
ক্ষমতা বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে
সূত্র বলছে, ২০২৫ সালে এই গোষ্ঠীর ক্ষমতা বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। আগের মতো গুগল ড্রাইভ বা পাবলিক ক্লাউডে ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে নয়, এবার তারা নির্ভর করছে নিজস্ব প্রাইভেট সার্ভার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ডেলিভারি সিস্টেমে। ফলে তাদের গতিবিধি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গোয়েন্দাদের ধারণা, ট্রান্সপারেন্ট ট্রাইব লাদাখ সীমান্তের অস্থির পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সামরিক যোগাযোগব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে, বিশেষ করে চিনের সেনা গতিবিধি সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ রিপোর্টগুলিতে প্রবেশের জন্য।
‘ডেস্কর্যাট’ ইনস্টল Transparent Tribe Cyber Attack
হ্যাকাররা পাঠাচ্ছে সরকারি নোটিস বা ইন্টেলিজেন্স ব্রিফিংয়ের ছদ্মবেশে ইমেল ও সংযুক্ত ZIP ফাইল, যাতে ‘ডেস্কর্যাট’ ইনস্টল হয়ে যায় নির্দোষ বলে মনে হওয়া কম্পিউটারগুলিতে। এই ইমেলগুলির সময় নির্বাচনও কৌশলগত, সীমান্ত সংঘর্ষ, নিরাপত্তা সতর্কতা বা জাতীয় ঘটনার সময়, যখন কর্মকর্তারা তথ্য জানতে সবচেয়ে সচেষ্ট থাকেন।
‘ডেস্কর্যাট’ তৈরি করা হয়েছে ভারতের সরকারি দপ্তরে ব্যবহৃত BOSS Linux সিস্টেমকে নিশানা করে। একবার প্রবেশ করলে এটি গোপনে কম্পিউটারের ফাইল ব্রাউজ করা, নথি কপি করা, কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য পাচার করতে পারে, কোনও অ্যালার্ম না বাজিয়েই। ফলে, মাসের পর মাস ধরে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য নিঃশব্দে বিদেশে পাচার হতে থাকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, ট্রান্সপারেন্ট ট্রাইব এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং বৃহৎ ভাষা মডেল (LLM) ব্যবহার করছে তাদের ম্যালওয়্যার উন্নয়নে। এতে নতুন সংস্করণ তৈরির সময় নেমে এসেছে কয়েক ঘণ্টায়, ফলে প্রতিটি আক্রমণ আগের চেয়ে আরও দ্রুত, সূক্ষ্ম ও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
কোডের নিঃশব্দ আঘাত
একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ভাষায়, “এটি কেবল হ্যাকিং নয়, এটি প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ। সীমান্তে বন্দুকের গর্জনের মতোই বিপজ্জনক এখন কোডের নিঃশব্দ আঘাত।”
সূত্র জানায়, এই অভিযানের লক্ষ্য তাৎক্ষণিক ধ্বংস নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি গুপ্তচরবৃত্তি, ভারতের প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যোগাযোগ, পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণের গোপন তথ্য সংগ্রহ করা।
‘ক্রিমসন র্যাট’ ম্যালওয়্যার
ট্রান্সপারেন্ট ট্রাইবের নাম অতীতে ‘ক্রিমসন র্যাট’ ম্যালওয়্যার হামলার সঙ্গেও যুক্ত। সেসময়ও তারা ভুয়ো পাওয়ারপয়েন্ট বা সরকারি নথির ছদ্মবেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। এপ্রিলে পহেলগাম জঙ্গি হামলার পর তারা নাকি ভুয়ো সরকারি বার্তা পাঠিয়ে কর্মকর্তাদের ফাঁদে ফেলেছিল, এমনটিও সন্দেহ করা হচ্ছে।
ভারতের সাইবার গোয়েন্দারা বলছেন, এটি সাম্প্রতিক কালের অন্যতম সবচেয়ে সংগঠিত ও পরিশীলিত সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি অভিযান। তাঁদের সতর্কবাণী, “এই যুদ্ধ এখন আর সীমান্তের গুলিতে সীমাবদ্ধ নয়; রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার লড়াই চলছে কোডের প্রতিটি লাইনে।”


