Car Attack in Mannheim: জার্মানির মানহাইমে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠে হতাহত বহু

জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মানহাইমের কেন্দ্রস্থলে সোমবার একটি গাড়ি পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়ার (Car Attack in Mannheim) ফলে কমপক্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত…

Tragic Car Attack in Mannheim

জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মানহাইমের কেন্দ্রস্থলে সোমবার একটি গাড়ি পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়ার (Car Attack in Mannheim) ফলে কমপক্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ইউরো নিউজ পুলিশকে উদ্ধতি করে জানিয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় শহরের প্যারাডেনপ্ল্যাটজ পথচারী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়, এবং পরে চোটের কারণে আরেকজন প্রাণ হারান, ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুই হয়। আহতের সংখ্যা ২৫ পর্যন্ত হতে পারে বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর একটি দেহ চাদরে ঢাকা পড়ে ছিল। ডিপিএ-র একজন সাংবাদিকও এই দৃশ্য দেখেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে চালককে গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় পুলিশ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য আর কোনো বিপদ নেই এবং দ্বিতীয় কোনো অপরাধীর সম্ভাবনা নেই। তবে শহরের কেন্দ্রে পুলিশের অভিযান এখনও চলছে।

kolkata24x7-sports-News

   

ঘটনার বিবরণ
এই ঘটনা ঘটে যখন মানহাইমে বার্ষিক কার্নিভাল উৎসবের জন্য লোকজন জমায়েত হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, একটি কালো বা গাঢ় রঙের কমপ্যাক্ট এসইউভি গাড়ি শহরের প্রধান কেনাকাটার রাস্তা প্ল্যাঙ্কেনে দ্রুতগতিতে এসে বেশ কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, চালক ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেছে। ঘটনার পর পুলিশ তৎক্ষণাৎ এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং একটি বড় ধরনের অভিযান শুরু করে।

মানহাইম ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল ‘বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া’ মোডে চলে গেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অন্তত তিনজন গুরুতর আহত—দুজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একটি শিশু—সেখানে চিকিৎসাধীন। দিনের শুরুতে পুলিশ জনসাধারণকে শহরের কেন্দ্র এড়িয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলেছিল। আকাশে পুলিশের হেলিকপ্টার ঘুরতে দেখা গেছে এবং কাছাকাছি সেতুতে যানবাহন পরীক্ষার জন্য চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছিল।

পুলিশের সতর্কতা ও তথ্য
মানহাইম পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে। তারা জনগণকে ঘটনার ভিডিও শেয়ার না করতে এবং শুধুমাত্র সরকারি সূত্র থেকে আপডেট গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন আতঙ্কে দৌড়াচ্ছে এবং জরুরি পরিষেবার কর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি অসম্মান হবে।

জার্মানিতে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপট
মানহাইমের এই ঘটনা জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক হামলার ধারাবাহিকতায় যোগ হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ আগে মিউনিখে একটি গাড়ি পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়ার ঘটনায় একজন মা ও তাঁর শিশুসন্তান নিহত হয়েছিল। এছাড়া, গত ডিসেম্বরে ম্যাগডেবার্গের একটি ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি হামলায় ছয়জন নিহত এবং ২০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো জার্মানিতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

মানহাইম শহরটি ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং এর জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এই শহরটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক জীবনের জন্য পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক এই ঘটনা শহরের শান্ত পরিবেশে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়িটি হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে এসে পথচারীদের ধাক্কা দেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, “ঘটনার পর বেশ কয়েকজন মানুষ মাটিতে পড়ে ছিল। দুজনের প্রাণ বাঁচানোর জন্য জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।” আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আমরা কার্নিভাল উৎসবের জন্য জড়ো হয়েছিলাম। হঠাৎ এই ঘটনায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।” শহরের কেন্দ্রে থাকা একটি রেস্তোরাঁর কর্মী মিকলা সেলা সিএনএন-কে বলেন, “আমি একটি কালো গাড়ি দ্রুতগতিতে চলে যেতে দেখেছি। তারপর চিৎকার শুনতে পাই এবং একজনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখি।”

তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া
পুলিশ এখনও এই ঘটনার উদ্দেশ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। বাডেন-ভুর্টেমবার্গ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস স্ট্রোবল জানিয়েছেন, চালক রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট রাজ্যের একজন ৪০ বছর বয়সী জার্মান নাগরিক। প্রাথমিক তদন্তে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তদন্তকারীরা চালকের মানসিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে।

জার্মানির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “এখন আমাদের মূল লক্ষ্য জীবন বাঁচানো, আহতদের চিকিৎসা এবং তদন্ত।” জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস এবং আগামী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস উভয়েই এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। শোলৎস বলেন, “আবারও আমরা একটি অর্থহীন হিংস্রতার শিকারদের জন্য শোকাহত।” মেরৎস জানান, “এই ঘটনা আমাদের জার্মানিকে আবারও নিরাপদ করার প্রতিজ্ঞাকে আরও দৃঢ় করেছে।”

জার্মানির নিরাপত্তা পরিস্থিতি
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জার্মানিতে একাধিক গাড়ি হামলার ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলেছে। গত মে মাসে মানহাইমেই একটি ছুরি হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকে দেশটি উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। মানহাইমের এই হামলা কার্নিভাল মরসুমের মধ্যে ঘটায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। পাশাপাশি হাইডেলবার্গ এবং অন্যান্য কাছাকাছি শহরগুলো তাদের কার্নিভাল উৎসব বাতিল করেছে।
মানহাইমের এই ঘটনা জার্মানির জন্য একটি কঠিন সময়ে আরেকটি ধাক্কা। পুলিশ ও জরুরি পরিষেবার দ্রুত প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এই হামলা প্রতিরোধ করা যায়নি। তদন্ত চলছে এবং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার পিছনের পূর্ণ সত্য উদঘাটনের জন্য কাজ করছে। এদিকে, শোকাহত শহরটি এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।