তিব্বতে ফের কম্পন (Tibet earthquake)। বুধবার দুপুরে ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তিব্বতের বিস্তীর্ণ এলাকা। জাতীয় ভূকম্পন বিজ্ঞান কেন্দ্রের (NCS) তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পটি দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে নথিভুক্ত হয়েছে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল তিব্বতের অভ্যন্তরে ২৮.১৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৬৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে, ভূকম্পনের গভীরতা প্রায় ১০ কিলোমিটার।
এর আগের দিনই, অর্থাৎ মঙ্গলবার, ৪.০ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তিব্বত। টানা দুই দিনে পরপর দুটি ভূমিকম্পে এলাকায় বাড়ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। ভূমিকম্পটি অগভীর হওয়ায় কম্পনের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়। অগভীর ভূমিকম্প সাধারণত বেশি বিপজ্জনক, কারণ সেগুলির তরঙ্গ খুব দ্রুত ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছে যায়, ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে।
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, তিব্বত অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম। এই মালভূমি পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় টেকটোনিক অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে হিমালয় গঠিত হয়েছে, যা আজও ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই সংঘর্ষের ফলেই তিব্বতের উচ্চতা বাড়ছে এবং বারবার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হচ্ছে।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, তিব্বত মালভূমির উত্তরাংশে স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্ট এবং দক্ষিণাংশে নরমাল ফল্ট প্রভাবশালী ভূতাত্ত্বিক গঠন। ১৯৭০-৮০-এর দশকে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রথম দক্ষিণ তিব্বতে সাতটি উত্তর-দক্ষিণমুখী রিফ্ট বা ফল্ট অঞ্চল আবিষ্কৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রায় ৪ থেকে ৮ মিলিয়ন বছর আগে এই ফল্টগুলির সৃষ্টি হয়েছিল ভূত্বকের প্রসারণের কারণে।
তিব্বতের ইতিহাসে একাধিক শক্তিশালী ভূমিকম্পের নজির রয়েছে। বৃহৎ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্ট বরাবর ঘটে, যার কম্পন ৮ মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ২০০৮ সালে তিব্বতে পরপর পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যেগুলির মাত্রা ছিল ৫.৯ থেকে ৭.১ এর মধ্যে।
যদিও বুধবারের ভূমিকম্পের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ওই অঞ্চলের চলমান ভূগঠনিক চাপের ইঙ্গিত দেয়। এমন ক্ষুদ্র মাত্রার কম্পন ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হতে পারে বলেও তারা মনে করেন।
এখনও পর্যন্ত কোনও বড় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর মেলেনি। তিব্বতের স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভূমিকম্পের উৎস এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণে কাজ শুরু করেছে বিজ্ঞানীরা।