H-4 ভিসা নিয়ে যারা ছোটবেলায় পরিবার-সহ আমেরিকায় চলে এসেছিলেন, তাদের জন্য এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এই ভিসার অধীনে থাকা ভারতীয় শিশুদের ২১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাঁদের আর H-1B ভিসা-ধারী বাবা-মায়ের নির্ভরশীল হিসেবে থাকার সুযোগ থাকবে না। আগে তারা ২১ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর দুই বছর সময় পেতেন, যাতে অন্য ভিসায় পরিবর্তিত হতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের ফলে এখন তাঁদের ভবিষ্যত একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, অনেক ভারতীয় এখন বিকল্প উপায় খুঁজছেন, যেমন কানাডা বা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে অভিবাসন নেওয়ার জন্য, যেখানে নীতির কিছুটা নমনীয়তা রয়েছে। আমেরিকায় চাকরি-ভিত্তিক গ্রীন কার্ড ব্যবস্থায় ভারতের অভিবাসীদের জন্য যে বিশাল ব্যাকলগ রয়েছে, তা বিশেষভাবে এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (USCIS) ২০২৬ অর্থবছরের জন্য H-1B ভিসার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ৭ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। H-1B ভিসা হলো একটি অস্থায়ী (নন-ইমিগ্র্যান্ট) ভিসা, যা বিশেষায়িত পেশায় কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেয়। প্রতিবছর এই ভিসার জন্য ৬৫,০০০ ভিসা বরাদ্দ করা হয়, এবং আরও ২০,০০০ ভিসা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রাপ্ত আবেদনকারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
USCIS সম্প্রতি একটি নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করেছে, যার মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে। নতুন নিবন্ধন ফি বর্তমানে ২১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে টাইমস অব ইন্ডিয়া-তে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, প্রায় ১.৩৪ লাখ ভারতীয় শিশু হোয়াইট হাউসের গ্রীন কার্ড প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ২১ বছর বয়সে তাদের নির্ভরশীলতা হারাতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থার ব্যাকলগের কারণে অনেকের আবেদন প্রায় ১২ থেকে ১০০ বছর পর্যন্তও প্রতীক্ষায় থাকতে পারে।
এছাড়া, সম্প্রতি টেক্সাস আদালতের একটি রায়ের ফলে Deferred Action for Childhood Arrivals (DACA) প্রোগ্রামের অধীনে নতুন আবেদনকারীদের কর্মসংস্থান অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামটি অবৈধ অভিবাসী যুবকদের ২ বছর পর্যন্ত প্রেরিত হওয়ার থেকে রক্ষা করত। এখন DACA’র সুবিধা না পাওয়ার কারণে অনেক ভারতীয় যুবক আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ছেন।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স H-1B প্রোগ্রামের সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ, এই প্রোগ্রামটি বড় বড় কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করছে এবং এটি ‘শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে উজ্জ্বল’ কর্মীদের আমন্ত্রণ জানাতে তৈরি হয়নি। বরং, এটি কম বেতনের বিদেশি শ্রমিকদের আমেরিকান কর্মীদের জায়গায় নিয়োগ দেয়। তিনি প্রস্তাব করেছেন, H-1B ভিসার ফি দ্বিগুণ করা হোক, যাতে প্রতিবছর ৩৭০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা যায়, এবং সেই টাকা ২০,০০০ STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপে ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি, তিনি H-1B কর্মীদের জন্য স্থানীয় মজুরির গড়ে বেতন নির্ধারণের প্রস্তাবও দিয়েছেন, যাতে তারা আমেরিকান কর্মীদের বেতন কমানোর সুযোগ না পায়।
তিনি Tesla প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক এবং ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা Vivek Ramaswamy-র সমালোচনা করেছেন, যারা H-1B প্রোগ্রামকে সমর্থন করেন, যদিও স্যান্ডার্স বিশ্বাস করেন যে এটি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। তার মতে, ২০২২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত শীর্ষ ৩০টি H-1B নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ৮৫,০০০ আমেরিকান কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে, অথচ ৩৪,০০০ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করেছে।
এই পরিস্থিতি বিশেষ করে তাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং, যারা ২১ বছর বয়সে H-4 ভিসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন। তাদের জন্য ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে উঠেছে, এবং তারা এখন অন্যান্য দেশ, যেমন কানাডা বা যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নেওয়ার কথা ভাবছেন।